প্রযুক্তি

বাংলাদেশে ফিচার ফোনের উৎপাদন স্মার্টফোনের তুলনায় বেশি: কারণ ও প্রভাব

বাংলাদেশে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে স্মার্টফোনের চাহিদা বাড়লেও, দেশে ফিচার ফোনের উৎপাদন এখনও বেশি। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে উৎপাদিত মোট ২ কোটি ৭২ লাখ হ্যান্ডসেটের মধ্যে ৬৯ শতাংশই ছিল ফিচার ফোন। এর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে চোরাচালানের মাধ্যমে আসা স্মার্টফোনের প্রভাবকে উল্লেখ করা হচ্ছে।

চোরাচালানের প্রভাব

মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি রিজওয়ানুল হক জানান, দেশের হ্যান্ডসেটের চাহিদার প্রায় ৩৫ শতাংশ চোরাচালানের মাধ্যমে মেটানো হয়। এতে স্থানীয় নির্মাতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চোরাই পথে আসা হ্যান্ডসেটের কারণে সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। ২০২৪ সালে সরকার প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

উৎপাদন প্রবণতা ও পরিসংখ্যান

২০১৭ সালে সরকার দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে কর সুবিধা প্রদান করে, যার ফলে ওয়ালটন মাত্র ৪০ হাজার থ্রিজি স্মার্টফোন উৎপাদন করে। এরপর থেকে উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও ফিচার ফোনের প্রাধান্য বজায় রয়েছে। ২০১৯ সালে দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদন ১ কোটি ৬ লাখে পৌঁছায়, যার মধ্যে ৬২ শতাংশ ছিল ফিচার ফোন। ২০২৩ সালেও ২ কোটি ৩৩ লাখ হ্যান্ডসেটের মধ্যে ৭০ শতাংশ ছিল ফিচার ফোন।

স্মার্টফোনের ব্যবহার হার ও আঞ্চলিক তুলনা

বিশ্বব্যাংকের ডিজিটাল অগ্রগতি ও প্রবণতা প্রতিবেদন ২০২৩ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের হার প্রায় ৫১.৭৭ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে কম। এমনকি আফগানিস্তানে এই হার ৫৫.৭৯ শতাংশ।

স্থানীয় উৎপাদনকারীদের প্রচেষ্টা

চোরাচালানের নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো মোবাইল ফোন উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ নরসিংদীর পলাশে ৩০ হাজার বর্গফুটের একটি কারখানা স্থাপন করেছে, যেখানে প্রতি মাসে সাড়ে ৩ লাখ ফিচার ফোন এবং ১ লাখ স্মার্টফোন উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে।

এছাড়া, নোকিয়া প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে মোবাইল ফোন সেট উৎপাদন করতে যাচ্ছে। ইউনিয়ন গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ভাইব্রেন্ট সফটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেডের মাধ্যমে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

চোরাচালানের কারণে স্থানীয় উৎপাদনকারীরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। তবে, সরকার যদি অবৈধ হ্যান্ডসেট আমদানি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং স্থানীয় উৎপাদনকে আরও উৎসাহিত করে, তাহলে দেশীয় মোবাইল ফোন শিল্প আরও সমৃদ্ধ হতে পারে। এতে করে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানির সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হবে।

প্রযুক্তিগত ভাবে বাংলাদেশে ফিচার ফোনের উৎপাদন এখনও স্মার্টফোনের তুলনায় বেশি। চোরাচালানের মাধ্যমে আসা হ্যান্ডসেটের কারণে স্থানীয় স্মার্টফোন বাজার প্রত্যাশিতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তবে, স্থানীয় উৎপাদনকারীদের প্রচেষ্টা এবং সরকারের সঠিক নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশীয় মোবাইল ফোন শিল্পকে আরও উন্নত করা সম্ভব।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button