পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে জালিয়াতি, অন্যের সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের (এনএসসি) সিস্টেমে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। অপরাধীদের ধাঁদ ধরতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো তদন্ত শুরু করেছে। এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে এবং মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সাধারণত গ্রাহক সঞ্চয়পত্রের জন্য ব্যাংক হিসাবের তথ্য সরবরাহ করেন। কিন্তু এবার অপরাধীরা অন্যের সঞ্চয়পত্র মেয়াদপূর্তির আগেই ভাঙিয়ে নিজের ব্যাংক হিসাবে টাকা স্থানান্তর করেছে।
জালিয়াতির কৌশল
অপরাধীরা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর চেষ্টা করেছে। সাধারণ প্রক্রিয়ায়, কোনো গ্রাহক সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে হলে সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন করতে হয়। আবেদন করার পর গ্রাহকের মোবাইল নম্বরে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) পাঠানো হয়। উপস্থিত গ্রাহক ওই ওটিপি ব্যবহার করে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে তথ্য পরিবর্তন বা টাকা উত্তোলন করেন।
তবে ঘটনায় দেখা গেছে, অপরাধীরা সেই নিয়ম ভাঙে। তারা গ্রাহকের ওটিপি ছাড়া, ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। একই দিনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে আরও সঞ্চয়পত্র ভাঙার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারিতে তা আটকে দেওয়া হয়।
ধাপক্রমিক ঘটনা
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনেন এক ব্যক্তি। তার ব্যাংক হিসাবটি ছিল অগ্রণী ব্যাংকের জাতীয় প্রেস ক্লাব শাখায়। চার দিন পর সোমবার, অপরাধীরা এই সঞ্চয়পত্র ভাঙে এবং টাকা স্থানান্তর করে এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর উপশাখার অন্য এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে। পরে সেই টাকা ব্যাংকের ঢাকার শ্যামলী শাখা থেকে তুলে নেওয়া হয়।
একই দিনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৩০ লাখ এবং এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি কার্যক্রমে এই দুইটি ঘটনা রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
তদন্ত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, যাদের হিসাবের অর্থ গেছে এবং যারা জালিয়াতিতে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে মামলা করা হবে। পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এই জালিয়াতি হওয়ায়, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নতুনদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এনআরবিসি ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুল আলম খান সাংবাদিকদের জানান, তারা ডিএমডির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন এবং কমিটি কাজ শুরু করেছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, গ্রাহক যেখান থেকে সঞ্চয়পত্র কেনেন, সেই ব্যাংক হিসাবেই টাকা জমা হয়। কোন তথ্য পরিবর্তন বা উত্তোলনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন করতে হয়। আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্যে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে যাচাই হয়।
গত বছর থেকে কিছু গ্রাহক অভিযোগ করেছেন যে, প্রবাসী আয় বা সঞ্চয়পত্রের টাকা উত্তোলন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ব্যাংক পরিবর্তনের আবেদন করেছেন অনেকেই। এই সুযোগকেই অপরাধীরা কাজে লাগিয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই জালিয়াতি দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সাধারণ গ্রাহকরা আতঙ্কিত এবং ব্যাংকিং সিস্টেমে বিশ্বাস হারাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের নিরাপত্তা পুনর্বল করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকিং সেক্টরে তথ্য নিরাপত্তা ও পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এছাড়া, নিয়মিত মনিটরিং এবং ফ্রড ডিটেকশন সিস্টেম কার্যকর করতে হবে।
পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এই জালিয়াতি দেশের অর্থনীতির জন্য সতর্কবার্তা। ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত শুরু করেছে, এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, ব্যাংকিং সিস্টেমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা কার্যকর এবং সাধারণ গ্রাহকেরা কতটা সুরক্ষিত থাকছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে, তাই সিস্টেমে তদারকি এবং প্রযুক্তিগত সংস্কারের দিকে সরকারের নজর আরও বাড়াতে হবে।
এম আর এম – ১৯৯৬,Signalbd.com



