জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, জুলাই সনদ অনুযায়ীই সংবিধান সংস্কার করতে হবে। তিনি বলেন, এর বাইরে কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংযোজন পরবর্তী জাতীয় সংসদ তাদের ইচ্ছেমতো করতে পারবে না।
আজ মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেওয়ার পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার
সংবিধান সংস্কার পরিষদকে কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার দেওয়া হলেও তারা নিজেদের মতো করে সংস্কার করতে পারবে না। আলী রীয়াজ বলেন, কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার মানে মৌলিক সংস্কার করা, কিন্তু জুলাই সনদ অনুযায়ী গাইডলাইন মেনে কাজ করতে হবে।
সংবিধান সংস্কার পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ যারা থাকবে, তাদের আপত্তি থাকলেও তারা প্রস্তাবিত সংস্কার তাদের ইচ্ছামতো পরিবর্তন করতে পারবে না। গণভোটে প্রস্তাবিত সংস্কারের বিষয়গুলো জনগণের কাছে উপস্থাপন হবে এবং জনগণ যদি অনুমোদন দেয়, তখন রাজনৈতিক দল সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে।
বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও সময়সীমা
কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে, পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত সংবিধান সংস্কার পরিষদ প্রথম অধিবেশন শুরু থেকে ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কারের কাজ শেষ করবে। এই কাজ শেষ হওয়ার পর সংবিধান সংস্কার পরিষদ বিলীন হয়ে যাবে প্রথাগত সংসদে।
সংসদে সংস্কার সংক্রান্ত কাজের প্রক্রিয়া দুটি বিকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে:
১. সরকার সংবিধান–সংক্রান্ত আদেশ জারি করে গণভোট আয়োজন করবে।
২. সরকার বিল আকারে ৪৮টি বিষয়কে প্রস্তুত করে জনগণের সামনে উপস্থাপন করবে।
আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন আশা করছে, সরকারের মাধ্যমে এটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিরোধী মত
যদিও বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে সই করেছে, কিছু দল এখনো সই করেনি। কমিশন তাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করছে যাতে তারা সই করে। আলী রীয়াজ বলেন, শেষ পর্যন্ত সব দলই সনদে স্বাক্ষর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গণভোটে যদি সংস্কারের প্রস্তাব পাস না হয়, তবে তা জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে যে সংবিধান সংস্কারে জনগণের সমর্থন রয়েছে।
দীর্ঘ আলোচনার পর রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে সই করলেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ রয়ে গেছে। ২০২৫ সালের শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কমিশনের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কারের কার্যক্রম তদারকি করছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য হলো দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করা, রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করা এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংবিধান সংস্কারের জন্য কমিশনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা এবং জুলাই সনদে প্রস্তাবিত কাঠামো মান্য করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আগামী প্রজন্মের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
আলী রীয়াজের মতে, কমিশন জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। সংবিধান সংস্কার পরিষদের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও গাইডলাইন অনুসরণ নিশ্চিত করবে যে রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
জুলাই সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়াই দেশের জন্য সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয়। কমিশনের তত্ত্বাবধানে সংবিধান সংস্কার পরিষদ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করবে। গণভোটের মাধ্যমে জনগণও এই প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণ করবে। সংবিধান সংস্কারের সঠিক বাস্তবায়ন দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও মজবুত করবে।
এম আর এম – ১৯৮৬,Signalbd.com



