ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস গ্রেভলি পৌঁছেছে। ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর রাজধানী পোর্ট অব স্পেনে নোঙর করা এই জাহাজ মার্কিন নৌবাহিনীর গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার। ওয়াশিংটনের তথ্য অনুযায়ী, এটি দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং মাদক ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে যৌথ মহড়া অংশ হিসেবে পাঠানো হয়েছে।
তবে ভেনেজুয়েলা এই পদক্ষেপকে সামরিক উসকানি আখ্যা দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, মহড়া ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ অপারেশনের মাধ্যমে চাপ তৈরি করা হতে পারে।
যৌথ সামরিক মহড়া ও মানবিক উদ্দেশ্য
স্থানীয় সময় রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ত্রিনিদাদ বাহিনী। ওয়াশিংটন জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য হলো প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
মহড়ায় উন্নত অস্ত্রব্যবস্থা, হেলিকপ্টার এবং মেরিন সদস্য যুক্ত থাকবেন। এছাড়া, এই মহড়ার মাধ্যমে মানবিক মিশন ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষণও প্রদান করা হবে। ওয়াশিংটন জানাচ্ছে, এটি সরাসরি কোনও আক্রমণ নয়।
মার্কিন যুদ্ধজাহাজের বিস্তারিত
ইউএসএস গ্রেভলি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ডেস্ট্রয়ার। এটি উচ্চ ক্ষমতার গাইডেড মিসাইল, রাডার সিস্টেম এবং হেলিকপ্টার অপারেশন সুবিধাসহ সমুদ্রের উপর অত্যন্ত দক্ষ। সম্প্রতি এই জাহাজ মাদকবিরোধী অভিযানে অংশ নিয়েছে এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে তার উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি দৃঢ় করার লক্ষ্যে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ নৌবহরের বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ডও ওই অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে। পুরো নৌবহর পাঠানো হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভেনেজুয়েলার প্রতিক্রিয়া
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, তারা দেশটিকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র করছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে, এই মহড়া সিআইএ সমন্বিত সামরিক প্ররোচনা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
প্রেসিডেন্ট মাদুরোর দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হলো ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা এবং ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে হুমকি তৈরি করা।
রাজনৈতিক উত্তেজনা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
মার্কিন সিনেটর রিক স্কট সতর্ক করে বলেছেন, “মাদুরোর দিন শেষ।” তিনি বলেন, মাদুরোকে রাশিয়া বা চীনে পালিয়ে যাওয়াই উত্তম। তবে সরাসরি হামলার সম্ভাবনা নেই বলেও উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, স্থানীয় ত্রিনিদাদ সরকার জনগণকে আশ্বস্ত করেছে, মহড়ার মাধ্যমে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। তবে সাধারণ জনগণের মধ্যে উদ্বেগ ও সংশয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সামরিক বিশ্লেষক মতামত
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জাভেদ আলী মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এখানে উল্লেখযোগ্য সামরিক শক্তি প্রদর্শন করছে, যার লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার ওপর চাপ সৃষ্টি। তিনি বলেন, “হোয়াইট হাউসের পরিকল্পনা বোঝা কঠিন, তবে এত ক্ষুদ্র উপস্থিতি দিয়ে সরাসরি আক্রমণ হয় না। এর মূল উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি।”
বিশেষজ্ঞরা আরও উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপ মাদকবিরোধী অভিযান ও যৌথ মহড়ার ছদ্মবেশে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের কৌশল।
সাম্প্রতিক সামরিক ইতিহাস
এই অঞ্চলে মার্কিন নৌবাহিনীর আগমন নতুন নয়। আগস্টে মার্কিন বাহিনী ৮টি যুদ্ধজাহাজ, ১০টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং একটি পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠিয়েছিল। ১৯৮৯ সালের পানামা আক্রমণের পর এটি ছিল ক্যারিবীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বড় সামরিক সমাবেশ।
ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো জানিয়েছেন, দেশটি উপকূল প্রতিরক্ষা মহড়া শুরু করেছে, যাতে বৃহৎ সামরিক হুমকি মোকাবিলা করা যায়।
সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সামরিক মহড়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপের সরঞ্জাম হিসেবে কাজ করবে। তবে সরাসরি যুদ্ধের আশঙ্কা কম।
ভেনেজুয়েলার সরকার অন্তর্দেশীয় সতর্কতা এবং নিরাপদ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আগামী সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে, বিশেষ করে যখন মহড়ার ফলাফল প্রকাশিত হবে।
এম আর এম – ১৯৬৬,Signalbd.com



