প্রযুক্তি

দেশের সর্ববৃহৎ ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র এখন ওয়ালটনে

Advertisement

বাংলাদেশে শিল্পায়নের ধারায় এক নতুন ইতিহাস রচনা করল দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া, কর্মপরিবেশ এবং কর্পোরেট কার্যক্রমে এনেছে পরিবেশবান্ধব “সবুজ প্রযুক্তি”-র বিস্তৃত প্রয়োগ। এরই ধারাবাহিকতায়, ওয়ালটন নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র (Floating Solar Power Plant) স্থাপন করেছে।

এই প্রকল্প শুধু ওয়ালটনের নয়, বরং পুরো বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায় যোগ করেছে।

ওয়ালটনের ফ্লোটিং সোলার পাওয়ার প্রজেক্ট: বাংলাদেশের শিল্পখাতে এক নতুন দিগন্ত

ওয়ালটনের এই প্রকল্পটি স্থাপন করা হয়েছে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সের জলাশয়ের ওপর
ক্ষমতা – ১ মেগাওয়াট
এটি এখন পর্যন্ত দেশের বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত সবচেয়ে বড় ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র

এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বুলনপুরে একটি ২.৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে মাত্র ০.৮ মেগাওয়াট অংশ জলাশয়ের ওপর ভাসমানভাবে স্থাপন করা হয়েছিল। সেই হিসেবে, ওয়ালটনের প্রকল্পটি ক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে সবচেয়ে উন্নত এবং বৃহত্তম।

পরিবেশবান্ধব শক্তির বিপ্লব: “গ্রিন এনার্জি”র পথে ওয়ালটনের যাত্রা

ওয়ালটনের Environment, Health & Safety (EHS) বিভাগের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান রাজু বলেন,

“এই ফ্লোটিং সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট বাংলাদেশের শিল্পখাতে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের এক অনন্য উদাহরণ। এটি প্রমাণ করে যে, টেকসই শিল্পোন্নয়ন প্রকৃতি ও প্রযুক্তির ভারসাম্যের মধ্য দিয়েই সম্ভব।”

তিনি আরও জানান, এই প্ল্যান্ট শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনই করছে না—বরং একই সঙ্গে ভূমি সংরক্ষণ, মাছ চাষ, পানির বাষ্পীভবন হ্রাস এবং পরিবেশ রক্ষা—এই চারটি ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব রাখছে।

এমনকি, ওয়ালটন ফ্যাক্টরিতে যখন উৎপাদন আংশিক থাকে বা বন্ধ থাকে, তখন প্ল্যান্টের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নেট মিটারিং সিস্টেমের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হয়, ফলে জাতীয় বিদ্যুৎ সরবরাহেও এটি অবদান রাখছে।

ফ্লোটিং সোলার প্ল্যান্টের বিশেষত্ব: পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রযুক্তি

এই সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যবহৃত ভাসমান কাঠামোগুলো (Floating Structure) তৈরি করা হয়েছে ফুড-গ্রেড প্লাস্টিক দিয়ে, যা পানির জন্য কিংবা মাছ বা জলজ প্রাণীর জন্য একেবারেই নিরাপদ।
প্যানেলগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যাতে জলজ প্রাণীর স্বাভাবিক জীবনচক্রে কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়।

প্রকল্পটির আয়ুষ্কাল ২০ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পুরো সময় জুড়ে এটি পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করেই নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।

জলাশয়, বিদ্যুৎ ও জীববৈচিত্র্য—সবকিছুতেই ভারসাম্য

ওয়ালটনের এই প্রকল্প শুধু একটি সৌর বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নয়; এটি একটি সমন্বিত ইকো-সিস্টেম
একদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, অন্যদিকে জলাশয়ের ওপর তৈরি হচ্ছে ছায়া, যা পানির তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। এর ফলে বাষ্পীভবন কমে যায়, জল সংরক্ষণ হয় এবং মাছের বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যদি এ ধরনের প্রকল্প আরও বেশি বাস্তবায়ন হয়, তবে তা দেশের বিদ্যুৎ সংকট নিরসন, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ওয়ালটনের নবায়নযোগ্য জ্বালানির যাত্রা: ছাদ থেকে জলাশয় পর্যন্ত

ওয়ালটনের টেকসই জ্বালানির প্রয়োগ শুধু এই ভাসমান প্রকল্পেই সীমাবদ্ধ নয়।
গাজীপুর হেডকোয়ার্টার্সের বিভিন্ন ভবনের ছাদ, ফুটপাত ও খালি জায়গায় ইতোমধ্যেই ১০ মেগাওয়াট রুফটপ সোলার প্রকল্প চালু করা হয়েছে।

এই সৌর প্যানেলগুলো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ফ্যাক্টরির উৎপাদন কার্যক্রমে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা জাতীয় গ্রিডের ওপর নির্ভরতা কমাচ্ছে এবং কার্বন নিঃসরণও হ্রাস করছে।

পানি সাশ্রয় ও পুনঃব্যবহারে ওয়ালটনের মডেল উদ্যোগ

শিল্প প্রক্রিয়ায় পানি ব্যবহারের পর ওয়ালটন অত্যাধুনিক ETP (Effluent Treatment Plant) এর মাধ্যমে সেই পানি পরিশোধন করে পুনঃব্যবহার করছে।
প্রতিষ্ঠানটি প্রক্রিয়াজাতকৃত পানির প্রায় ৭৫ শতাংশ নিরাপদভাবে পুনঃব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে।

এর ফলে পানি অপচয় কমছে, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষিত হচ্ছে এবং পরিবেশের ওপর চাপ কমছে।

ই-বর্জ্য ও প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারে ওয়ালটনের নেতৃত্ব

ওয়ালটন দেশীয় শিল্পখাতে ই-বর্জ্য সংগ্রহ ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
পুরনো ইলেকট্রনিক পণ্য থেকে পাওয়া যন্ত্রাংশগুলো পুনর্ব্যবহার বা আপসাইক্লিং করে নতুনভাবে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হচ্ছে।

একই সঙ্গে, প্লাস্টিক বর্জ্য পুনঃব্যবহার করে নতুন উপকরণ তৈরির মাধ্যমে সম্পদের অপচয় কমানো হচ্ছে।

ফলে ওয়ালটন এখন শুধু একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নয়—এটি একটি পরিবেশবান্ধব টেকসই শিল্প মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে অভাবনীয় সাফল্য

ওয়ালটনের এসব টেকসই উদ্যোগের ফলে ইতোমধ্যেই ৯১১,৮২৩ মেট্রিক টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস পেয়েছে।
সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠানটির কার্বন ফুটপ্রিন্ট ১০ শতাংশ কমেছে

এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার শিল্পখাতেও এক বিরল সাফল্য।

বিশ্বজুড়ে যখন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, তখন ওয়ালটনের এই সাফল্য “গ্লোবাল গ্রীন ইন্ডাস্ট্রি”র উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা: আরও দুটি ফ্লোটিং সৌর প্রকল্প আসছে

ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যে আরও দুটি জলাশয়ে ফ্লোটিং সোলার পাওয়ার প্রজেক্ট স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে কোম্পানির মোট নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা আরও কয়েক মেগাওয়াট বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের টেকসই জ্বালানি খাতকে নতুন মাত্রা দেবে।

শিল্প ও প্রকৃতি—একসঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে ওয়ালটন

ওয়ালটন প্রমাণ করেছে যে, শিল্পোন্নয়ন মানেই পরিবেশ ধ্বংস নয়।
বরং সঠিক প্রযুক্তি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে শিল্প, প্রকৃতি ও সমাজ—এই তিনটি উপাদানের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়ালটনের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
ভবিষ্যতের বাংলাদেশে যখন কার্বন-নিরপেক্ষ উন্নয়ন (Carbon Neutral Development) একটি লক্ষ্য হবে, তখন ওয়ালটন হবে সেই আন্দোলনের অগ্রগামী নাম

বাংলাদেশের শিল্পখাত আজ একটি পরিবর্তনের পথে।
ওয়ালটনের ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র শুধু একটি প্রকল্প নয়—এটি বাংলাদেশের সবুজ ভবিষ্যতের প্রতীক
যেখানে প্রযুক্তি, পরিবেশ ও মানুষের উন্নয়ন একসাথে এগিয়ে যাচ্ছে।

ভবিষ্যতে এই উদ্যোগ দেশের অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে অনুপ্রাণিত করবে নবায়নযোগ্য শক্তি ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন পদ্ধতি গ্রহণে।
সবশেষে বলা যায় —
ওয়ালটন আজ শুধু একটি ব্র্যান্ড নয়, বরং বাংলাদেশের “সবুজ বিপ্লবের” পথপ্রদর্শক।

MAH – 13505 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button