বিশ্ব

পাকিস্তানের বিকল্প বাণিজ্যপথ খুঁজছে আফগানিস্তান

Advertisement

ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান বর্তমানে পাকিস্তানের উপর নির্ভরতা কমিয়ে নতুন বাণিজ্য ও ট্রানজিট পথ অনুসন্ধান করছে। দেশের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী নূর উদ্দিন আজিজী জানিয়েছেন, আফগানিস্তান এখন এমন পথ তৈরি করতে চাচ্ছে যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।

আজিজী এই মন্তব্য করেছেন আফগান–কাজাখ বাণিজ্য প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের আগে। তিনি বলেন, “আমরা পাকিস্তানের উপর দীর্ঘদিনের নির্ভরতা কমাতে চার বছর আগে থেকেই বিকল্প বাণিজ্য ও ট্রানজিট পথ তৈরি করার চেষ্টা শুরু করেছি। বর্তমানে এই প্রচেষ্টা আরও দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।”

পাকিস্তানের বাধা, আফগান ব্যবসায়ীদের ক্ষতি

আজিজীর কথায়, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে নানা অজুহাত দেখিয়ে আফগান ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যিক ও ট্রানজিট রুট বন্ধ করে রেখেছে। এর ফলে আফগানিস্তানের রপ্তানি কার্যক্রমে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়েছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান প্রায় কয়েক দশক ধরে বাণিজ্য ও ট্রানজিট রুটকে চাপ প্রয়োগের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। তারা মনে করেন, ইমারাতে ইসলামিয়ার বিকল্প পথ তৈরি করা উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও লাভজনক। এটি শুধুমাত্র আফগান ব্যবসায়ীদের স্বাধীনতা দেবে না, বরং দেশের অর্থনীতিকেও সুরক্ষা দেবে।

বিকল্প রুটের প্রয়োজনীয়তা

পাকিস্তান-আফগান সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে দেখা গেছে, বাণিজ্য ও ট্রানজিট রুটগুলো প্রায়ই রাজনৈতিক কারণে বন্ধ থাকে। এতে আফগান ব্যবসায়ীরা বারবার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দুই সপ্তাহ ধরে আফগানিস্তানের বাণিজ্যিক রুটগুলো পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যবসা লেনদেন প্রায় স্থবির অবস্থায় পড়েছে।

এ পরিস্থিতি আফগানিস্তানের অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষ করে, কাঁচামাল ও শিল্পপণ্য রপ্তানি পাকিস্তানের রুটের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় বিপুল ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিকল্প পথ খুঁজে বের করা এখন সময়ের দাবি।

মধ্য এশিয়া ও ইরান সহ বিকল্প বাণিজ্যপথ

আফগানিস্তান ইতিমধ্যে পাকিস্তানের বাইরে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো এবং ইরানের সঙ্গে স্থলপথ ও আকাশপথে বাণিজ্য ও ট্রানজিট কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিশেষ করে, ইরানের চাবাহার বন্দরের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্থাপন আফগান পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ বাড়িয়েছে।

ইমারাতে ইসলামিয়া এখন নিম্নলিখিত বিকল্প পথগুলো যাচাই করছে:

  1. ইরানের চাবাহার পোর্ট: আফগান পণ্য চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রুত ও সাশ্রয়ীভাবে পৌঁছানো সম্ভব।
  2. মধ্য এশিয়ার স্থলপথ: তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান ও কাজাখস্তানের সঙ্গে সরাসরি ট্রানজিট রুট তৈরি করা।
  3. আকাশপথ বাণিজ্য বৃদ্ধি: আন্তর্জাতিক এয়ার কার্গো ব্যবহার করে দ্রুত পণ্য রপ্তানি।
  4. সমুদ্রপথ বিকল্প: যদি সম্ভব হয়, পাকিস্তানের ছাড়াই পার্শ্ববর্তী দেশের মাধ্যমে সমুদ্রপথে পণ্য রপ্তানি।

আজিজী বলেন, “আমরা চাই, আফগান ব্যবসায়ীরা যেন নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য বাণিজ্যপথ ব্যবহার করতে পারে। এজন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য চুক্তি ও নীতিমালা উন্নয়ন আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”

আফগান ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া

আফগান ব্যবসায়ীরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, পাকিস্তানের উপর নির্ভরতা কমানো হলে তাদের রপ্তানি খরচ কমবে, পণ্য সরবরাহ দ্রুত হবে, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।

একজন আফগান ব্যবসায়ী জানান, “পাকিস্তান প্রায়ই বাণিজ্যিক লেনদেনকে রাজনৈতিক চাপের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। বিকল্প পথ তৈরি হলে আমাদের ব্যবসা স্থিতিশীল হবে এবং নতুন বাজারে প্রবেশ সহজ হবে।”

আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ

বিশ্ব অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আফগানিস্তানের এই উদ্যোগ শুধু দেশীয় অর্থনীতির জন্যই নয়, আঞ্চলিক বাণিজ্য ও স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের বিকল্প পথ অনুসন্ধান করলে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়বে এবং আফগান পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক হবে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, “আফগানিস্তান যদি সঠিকভাবে এই নতুন রুটগুলো কার্যকর করতে পারে, তবে তা দেশের অর্থনীতির জন্য যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। এটি আফগান ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে।”

চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

নতুন বাণিজ্যপথ তৈরি করা সহজ কাজ নয়। আফগানিস্তানকে নিম্নলিখিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে:

  • নতুন রুটে নিরাপত্তা ও লজিস্টিক ব্যবস্থার উন্নয়ন।
  • মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি ও নীতিমালা সমন্বয়।
  • আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মান ও প্রতিযোগিতার মান নিশ্চিত করা।

তবে আফগান মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চাচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা নতুন বাণিজ্যপথ কার্যকর ও স্থায়ী করার পরিকল্পনা করছে।

ইমারাতে ইসলামিয়ার এই উদ্যোগ আফগানিস্তানের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। পাকিস্তানের ওপর নির্ভরতা কমানো, বিকল্প বাণিজ্যপথ তৈরি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আফগানিস্তান অর্থনৈতিকভাবে আরও স্বাবলম্বী এবং স্থিতিশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।

এছাড়া, এই উদ্যোগের ফলে আফগান পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ সহজ হবে, ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি কমবে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য ও স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

MAH – 13502 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button