বিশ্ব

তুরস্কের নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা

Advertisement

তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প নতুন একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি দেশের অন্যতম ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রোকেটসান (Roketsan) দ্বারা তৈরি। পরীক্ষা তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা দেশটির আধুনিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও শক্তিশালী করছে।

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) প্রতিরক্ষা শিল্প সচিবালয়ের প্রধান হালুক গোরগুন এই সফল পরীক্ষার খবর নিশ্চিত করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লিখেছেন,
“একটি নীরব প্রস্তুতি, একটি মুহূর্ত… এবং আকাশে আঁকা একটি স্বাক্ষর। সুন্দর একটি দিন, আরেকটি সফল পরীক্ষা। পরিসর বাড়ছে, আঘাতের নির্ভুলতা বাড়ছে। রোকেটসান ও যারা অবদান রেখেছেন, তাদের ধন্যবাদ।”

এই বার্তা তুরস্কের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) ক্ষেত্রে দেশের অগ্রগতি এবং রোকেটসানের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের পরিচায়ক।

রোকেটসানের ভূমিকা ও তুরস্কের ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন

তুরস্কের রোকেটসান প্রতিষ্ঠান ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও দ্রুতই এটি দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের ব্যালিস্টিক মিসাইল, টর্কেডো, এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম তৈরি করে থাকে। বিশেষ করে, টাইফুন সিরিজের শর্ট-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল দেশের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ তুরস্ক ইতিমধ্যেই টাইফুন মিসাইল সিস্টেমের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছিল। রোকেটসানের প্রধান মুরাত ইকিঞ্চি গত জুলাইয়ে জানিয়েছিলেন যে, টাইফুনের উন্নত সংস্করণ ‘ব্লক-৪’ শীঘ্রই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হবে। এটির মূল বৈশিষ্ট্য হলো বর্ধিত পরিসর, উন্নত লক্ষ্য নির্ধারণ এবং আঘাতের উচ্চ নির্ভুলতা

নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের বৈশিষ্ট্য ও সম্ভাব্য প্রভাব

নতুন পরীক্ষিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ। এর মধ্যে রয়েছে:

  • দূরপাল্লার লক্ষ্যভেদ ক্ষমতা: ক্ষেপণাস্ত্রটি দীর্ঘদূরত্বে স্থির লক্ষ্যভেদ করতে সক্ষম।
  • উচ্চ নির্ভুলতা ও স্থিতিশীলতা: প্রতিরক্ষা ও আক্রমণ উভয় ক্ষেত্রেই কার্যকর।
  • রোকেটসানের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি: গত কয়েক বছরে রোকেটসান উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রকে আরও কার্যকর করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের সফল পরীক্ষা তুরস্কের প্রতিরক্ষা স্বয়ংসম্পূর্ণতা বাড়াতে সহায়ক হবে। এটি শুধু সামরিক শক্তি নয়, বরং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তুরস্কের প্রতিশ্রুতিশীল প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।

তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের সম্প্রসারণ

তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সম্প্রতি অনেক ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি করেছে। শুধুমাত্র ক্ষেপণাস্ত্র নয়, ড্রোন, এয়ারক্রাফট, সাবমেরিন, এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমেও দেশটি উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখাচ্ছে। বিশেষ করে, রোকেটসানের গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দেশীয় উৎপাদন ও প্রযুক্তি নির্ভরশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন ব্যালিস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা তুরস্কের সীমান্ত নিরাপত্তা ও কৌশলগত শক্তি বাড়াতে সহায়ক হবে। এছাড়াও, এটি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি রপ্তানি সম্প্রসারণের সম্ভাবনাও উন্মুক্ত করছে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তুরস্কের এই পরীক্ষাটি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশীয় উৎপাদনের দিক থেকে তুরস্ক স্বনির্ভরতা অর্জন করতে চাইছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মাধ্যমে তুরস্ক প্রযুক্তিগত দিক থেকে একটি শক্তিশালী প্রভাবশালী দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করছে। এটি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দেশীয় গবেষণা ও উন্নয়নের গুরুত্বও প্রমাণ করছে।

তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পে রোকেটসানের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা দেশের সামরিক শক্তি ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে আরও দৃঢ় করেছে। হালুক গোরগুনের উক্তি অনুযায়ী, এই পরীক্ষা নীরব প্রস্তুতি ও মুহূর্তের মাধ্যমে অর্জিত সাফল্য

এটি তুরস্কের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি উন্নয়ন, সীমান্ত নিরাপত্তা, এবং আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বাজারে প্রতিশ্রুতি বাড়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

MAH – 13485 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button