দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত বিরোধ সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির সাক্ষী ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি বর্তমানে এক সপ্তাহের এশিয়া সফরে রয়েছেন। চুক্তিটি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হয়।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে ট্রাম্প বলেন, “এটি শুধুমাত্র দুই দেশের জন্য নয়, সমগ্র অঞ্চলের জন্য শান্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এটি একটি ঐতিহাসিক দিন।”
চুক্তির পটভূমি:
গত জুলাই মাসে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্ত এলাকায় সংঘটিত সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতি, যা ৫ দিনের জন্য চলেছিল, তার মধ্যে অন্তত ২৪ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, ওই সময় দুই দেশের সীমান্তে অস্ত্রবাজি ও ছোটখাট সংঘাত চলছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের কূটনৈতিক মধ্যস্থতায় সেই সংঘাতের অবসান ঘটে। এরপর দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়, যার ফলশ্রুতিতে রোববারের এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।
চুক্তির মূল বিষয়সমূহ:
১. সীমান্তে যুদ্ধবিরতি স্থায়ী করা – চুক্তির মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় পুনরায় সংঘর্ষ এড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
২. অস্ত্র প্রত্যাহার ও নিরস্ত্রীকরণ – উভয় দেশের সেনাবাহিনী ধাপে ধাপে অস্ত্র প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করবে।
৩. যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি – চুক্তি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধবন্দিদের দ্রুত মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
৪. দীর্ঘমেয়াদী শান্তি বজায় রাখা – চুক্তি বাস্তবায়ন হলে এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্থায়ী শান্তির জন্য মাইলফলক হবে।
দুই দেশের নেতা ও ট্রাম্পের প্রশংসা:
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী উভয়েই ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা দ্রুত অস্ত্র প্রত্যাহার ও যুদ্ধবন্দিদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করব। এই চুক্তি যদি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি আমাদের অঞ্চলের জন্য স্থায়ী শান্তির ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।”
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীও বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃঢ় নেতৃত্ব ও নিরলস প্রচেষ্টার কারণে আজ আমরা এই ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি দেখতে পেরেছি।”
ট্রাম্পের এশিয়া সফরের প্রেক্ষাপট:
মালয়েশিয়ায় এই চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ট্রাম্প জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়া সফরে ছিলেন। তার সফরের মূল লক্ষ্য ছিল এপেক সম্মেলনে অংশ নেওয়া এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক। গেয়ংজু শহরে অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলনের সাইডলাইনে দুই নেতার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এশিয়া সফর কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করছেন এবং ব্যবসায়িক ও সামরিক সহযোগিতার নতুন পথ তৈরি করছেন।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট:
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সীমান্ত বিরোধ বহু বছর ধরে চলছিল। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে পূর্বের বিরোধের মূল কারণ ছিল সীমান্ত অঞ্চল নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং ভূ-রাজনৈতিক চাপ। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এবং ট্রাম্প প্রশাসনের তৎপরতায়, উভয় দেশের সরকার চূড়ান্ত সমাধানের দিকে এগিয়েছে।
বিশ্বমঞ্চে এ চুক্তিকে ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য স্থায়ী শান্তির সূচনা হিসেবে কাজ করতে পারে। এছাড়া এটি অঞ্চলের বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও পর্যটন শিল্পে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া:
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সাধারণ মানুষও শান্তি চুক্তি স্বাগত জানিয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় বহু মানুষ কয়েক দশক ধরে ছোটখাট সংঘর্ষ এবং নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছিল। চুক্তি বাস্তবায়ন হলে, তারা নিরাপদ জীবন, শিক্ষা এবং ব্যবসার সুযোগ ফিরে পাবে বলে আশাবাদী।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, “এটি আমাদের জন্য একটি নতুন সূচনা। আমরা আশা করি চুক্তি দীর্ঘমেয়াদে শান্তি বজায় রাখবে।”
বিশেষ বিশ্লেষণ:
- মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় চুক্তি স্বাক্ষর একটি কূটনৈতিক সাফল্য।
- এটি শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সমস্যার সমাধান নয়, বরং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করছে।
- এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে, তা ভবিষ্যতে অঞ্চলভিত্তিক সংঘাত কমাতে সহায়ক হবে।
MAH – 13483 I Signalbd.com



