অর্থনীতি

জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এলো ২১৮ কোটি ডলার

চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে প্রবাসীরা বাংলাদেশে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। গত মাসে, অর্থাৎ ডিসেম্বরে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল রেকর্ড ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এর ফলে জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় আগের মাসের তুলনায় ৪৫ কোটি ডলার কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিকতা

গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে প্রতি মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। ডিসেম্বরে প্রবাসী আয়ে রেকর্ড হয়েছিল, যেখানে ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার পাঠানো হয়েছিল। এর আগে, ২০২০ সালের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

বর্তমানে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ ভালো অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে, যখন দেশের বাজারে ডলার সরবরাহে ঘাটতি অব্যাহত আছে। খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বৈদেশিক মুদ্রার এই ঘাটতি মোকাবিলায় প্রবাসী আয় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের রেমিট্যান্স

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে এক হাজার ৩৭৭ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগের বছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল এক হাজার ৮০ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ, আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৯৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ জোরালো হতে শুরু করে। ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় ২৬৩ কোটি ডলার ছিল, যা আগের বছরের ডিসেম্বরে ছিল ১৯৯ কোটি ডলার। এই হিসাবে ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় বেড়েছিল ২৪ শতাংশের বেশি।

মাস ভিত্তিক রেমিট্যান্সের পরিসংখ্যান

২০২৩ সালের নভেম্বরে প্রবাসী আয় আসে ২২০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের নভেম্বরে ছিল ১৯৩ কোটি ডলার। নভেম্বরে প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। এছাড়া, গত অক্টোবরে দেশে ২৩৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি।

প্রবাসী আয় এবং দেশের অর্থনীতি

প্রবাসী আয় হলো দেশে ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস। এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না এবং কোনো দায়ও পরিশোধ করতে হয় না। রপ্তানি আয়ের বিপরীতে দেশে ডলার এলেও তার জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয়। অন্যদিকে, বিদেশি ঋণ পরিশোধের জন্যও ডলারের প্রয়োজন হয়। ফলে, প্রবাসী আয় বাড়লে দেশে ডলারের মজুতও দ্রুত বাড়ে।

পূর্ববর্তী মাসগুলোর রেমিট্যান্স

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার, আগস্টে আসে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বর মাসে আসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার, অক্টোবরে আসে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার, নভেম্বর মাসে আসে ১৯৩ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে আসে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ ডলার, জানুয়ারিতে আসে ২১১ কোটি ৩১ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে আসে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, মার্চ মাসে আসে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার, এপ্রিলে আসে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার, মে মাসে আসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার এবং জুন মাসে এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স।

জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় কমলেও, সামগ্রিকভাবে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ দেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত। প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের ডলার সরবরাহে সহায়তা করছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button