ফেনী জেলার সীমান্ত এলাকা থেকে ভারত থেকে তোলার চেষ্টাকৃত শাড়ি, পোশাক, গরু ও বিভিন্ন মালামাল জব্দ করেছে বাংলাদেশ সীমান্ত বাহিনী (বিজিবি)। জব্দকৃত মালামালের আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি। শনিবার দুপুরে ফেনী ৪ বিজিবি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফুলগাজী-পরশুরাম ও চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ভারত থেকে অবৈধভাবে আনা শাড়ি, পোশাক এবং গবাদি পশু আটক করা হয়েছে।
ফেনী ৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশারফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বিজিবি দীর্ঘদিন ধরে দেশের সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, মাদকবিরোধী অভিযান এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমরা নিয়মিতভাবে দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় সম্পদ রক্ষা করে আসছি।”
চোরাচালান ও মাদকবিরোধী অভিযানে বিজিবির সাফল্য
চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিজিবি দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে।
- চোরাচালানকৃত মালামাল:
- মোট ৩৭০ জন আসামি গ্রেপ্তার
- ৭০৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫২ হাজার ২৬৪ টাকার মালামাল জব্দ
- গবাদি পশু: ৪,২০২টি গরু, ১,২৮৬টি মহিষ
- মোবাইল ফোন: ২,৫৬৯টি
- পাথর: ২ লাখ ৬ হাজার ১৩৯ ঘনফুট
- বালু: ২১ হাজার ২৩৫ ঘনফুট
- বালুর মেশিন: ১১টি
- চিনি: ১১ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৮ কেজি
- জিরা: ১ লাখ ৫৩ হাজার ১২৯ কেজি
- শাড়ি: ৮২,৭১০টি
- যানবাহন: ৭,৪১৯টি
- মাদকবিরোধী অভিযান:
- মদ: ৭৮,২৫৪ বোতল
- ফেনসিডিল: ২৪,৭৬৩ বোতল
- ইয়াবা: ২,৮০,১৪৪টি
- বিয়ার ক্যান: ৯,০৮৬টি
- গাঁজা: ১৪,৬৪৪ কেজি
এছাড়াও এই অভিযানগুলিতে মাদক পাচারে জড়িত একাধিক চোরাচালানকারীকে গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের নয়টি অস্ত্র এবং ছয় রাউন্ড গুলি।
বিজিবির সীমান্ত সুরক্ষা এবং দেশের সম্পদ রক্ষ
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশারফ হোসেন আরও জানান, বিজিবি কেবল চোরাচালান রোধেই নয়, বরং সীমান্তবর্তী এলাকায় সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রেও সক্রিয়। বিজিবি নিয়মিত সীমান্তে পাহারা দিয়ে অবৈধ কর্মকাণ্ড রোধ করছে।
তিনি বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত সীমান্ত পেরিয়ে চোরাচালানকারী ও মাদক কারবারিদের গতিবিধি নজরে রাখছি। আমাদের লক্ষ্য দেশের সম্পদ রক্ষা করা এবং চোরাচালান বন্ধ করা।”
ফেনী সীমান্তের গুরুত্ব
ফেনী জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এবং ভারতের সাথে দীর্ঘ সীমান্ত ভাগ করে। এই সীমান্ত এলাকাগুলি প্রায়শই চোরাচালান ও মাদক পাচারের হটস্পট হিসেবে পরিচিত।
- ফুলগাজী ও পরশুরাম: ভারত সীমান্তবর্তী, যেখানে নিয়মিত অবৈধ প্রবেশ ও মালামাল আনা-নেওয়ার ঘটনা ঘটে।
- জোরারগঞ্জ (চট্টগ্রাম): চোরাচালানের জন্য পরিচিত এলাকা। বিজিবি নিয়মিত অভিযান চালিয়ে এখানকার অবৈধ কার্যক্রম রোধ করছে।
দেশের অর্থনীতিতে চোরাচালানের প্রভাব
চোরাচালান এবং মাদকপাচার শুধু আইনগত সমস্যা নয়, এটি দেশের অর্থনীতির জন্যও হুমকি। অবৈধভাবে আনা মালামাল ও মাদকবস্তু দেশীয় ব্যবসা ও কৃষি খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বিজিবির সচেষ্টতা দেশের ন্যায়সঙ্গত ব্যবসা, কৃষি উৎপাদন এবং নিরাপদ পরিবেশ রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি অভিযানের মাধ্যমে বিজিবি দেশের সীমান্তে অবৈধ কার্যক্রম কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বিজিবির ভবিষ্যৎ পরিকল্পন
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশারফ হোসেন বলেন, “আমরা সীমান্তে আরও প্রযুক্তি ব্যবহার করে চোরাচালান ও মাদক পাচার রোধে কাজ করছি। নতুন সেন্সর, ড্রোন এবং নজরদারি ব্যবস্থা দিয়ে সীমান্তকে আরও শক্তিশালী করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সীমান্তবর্তী জনগণকে আমরা সচেতন করতে সচেষ্ট। জনগণও আমাদের সহযোগিতা করলে চোরাচালান রোধে সহায়তা করতে পারে।”
সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও বিজিবির ভূমিকা
বিজিবি শুধু চোরাচালান নয়, সীমান্তবর্তী এলাকায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও প্রতিনিয়ত কাজ করছে। বিজিবি স্কুল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং সামাজিক উদ্যোগেও অংশ নিচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড এলাকার জনগণকে স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
ফেনী সীমান্তে বিজিবির অভিযান দেশের সীমান্ত সুরক্ষা এবং জাতীয় সম্পদ রক্ষায় একটি বড় সাফল্য। ভারতীয় মালামাল এবং বিভিন্ন চোরাচালানকারী আটক করে বিজিবি দেশের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনীতির সুরক্ষা নিশ্চিত করছে।
এই অভিযান দেখায়, সীমান্তে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি কতটা কার্যকরভাবে কাজ করছে। দেশের অর্থনীতি, সামাজিক শান্তি এবং সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য এই ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।
MAH – 13468 I Signalbd.com



