বিশ্ব

গাজায় কবরস্থানই এখন হাজারো জীবিত ফিলিস্তিনির শেষ আশ্রয়স্থল

Advertisement

 ইসরায়েলি হামলার ধ্বংসযজ্ঞে গাজার হাজারো বাসিন্দা ঘরবাড়ি হারিয়েছে। নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে তারা কবরস্থানের পাশে বা ভিতরে তাঁবু টাঙিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন।

গাজার উপত্যকায় চলমান সংঘর্ষ ও ইসরায়েলি আক্রমণের ফলে হাজারো ফিলিস্তিনি পরিবারের জন্য কবরস্থানই জীবিতদের একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়ায় মানুষেরা বাধ্য হয়ে কবরস্থানের পাশে তাঁবু টাঙিয়ে বসবাস করছেন। পরিস্থিতি মানবিকভাবে ক্রান্তিকালীন এবং বহু পরিবার ক্ষুধা, পানি ও বিদ্যুতের অভাবের সঙ্গে লড়াই করছেন।

কবরস্থানে জীবিতদের আশ্রয়

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহর থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খৌদারি জানিয়েছেন, “কবরস্থানগুলো মানুষের থাকার জন্য নয়। কিন্তু আজ এটি হয়ে উঠেছে সেইসব পরিবারের শেষ আশ্রয়স্থল, যাদের আর কোনো বিকল্প নেই।”

উত্তর গাজার বেইত হানুন শহরের রামি মুসালেহ বলেন, “আমাদের পরিবারের কাছে কবরস্থান ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। এটা অভিভাবকদের জন্য ভীষণ মানসিক চাপের। যুদ্ধের মানসিক ক্ষত আরও গভীর হয়, যখন সন্তানদেরকে কবরের পাশে বড় করতে হয়।”

কবরস্থানে পানি, বিদ্যুৎ, এবং গোপনীয়তার অভাব থাকলেও মানুষ বেঁচে থাকার জন্য এ অবস্থান গ্রহণ করতে বাধ্য। সাবাহ মুহাম্মদ আরও জানান, “কবরস্থানগুলো মৃতদের জন্য পবিত্র স্থান, এখন তা জীবিতদের একমাত্র আশ্রয়স্থল। এখানে থাকা মানে প্রতিদিন মৃত্যুর ছায়ায় বেঁচে থাকা।”

গাজার মানবিক সংকট

গত কয়েক মাসে গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও নিষেধাজ্ঞার ফলে ত্রাণ কার্যক্রম সীমিত হয়েছে। মার্কিন সমর্থিত যুদ্ধবিরতি থাকলেও পরিস্থিতি এখনও ভঙ্গুর। গাজার বিভিন্ন এলাকা ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার কমপক্ষে ১৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা উপত্যকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ। এর মধ্যে অনেকেই বহুবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সীমান্তে নানা প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান। কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে কিছু মাত্র ত্রাণ প্রবেশ করছে, উত্তরাঞ্চলের কোনো ক্রসিং এখনও খোলা হয়নি।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

গাজার বাসিন্দারা মনে করছেন, কবরস্থানে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন কোনো স্বেচ্ছাচারিতা নয়, এটি একটি জরুরি প্রয়োজন। কেউ কেউ বলেছেন, “এমন পরিস্থিতিতে বাঁচার জন্য কবরস্থানই একমাত্র বিকল্প।”

স্থানীয়রা আরও জানাচ্ছেন, শিশুদের জন্য কবরস্থানে থাকা ভীষণ মানসিক চাপের। অভিভাবকদের জন্য প্রতিটি দিন মৃত্যুর ছায়ায় কাটছে। পুষ্টি, পানি ও নিরাপত্তার অভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক মানবিক প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ), বারবার ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়ার জন্য। তবে সীমিত প্রবেশের কারণে হাজারো পরিবার এখনো অভুক্ত ও পানিশূন্য অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে গাজার মানবিক সংকট আরও গভীর হবে। ধ্বংসস্তূপে আশ্রয় নেওয়া মানুষের জীবন নিরাপদ নয় এবং সামাজিক ও মানসিক চাপ ক্রমেই বাড়ছে।

পরিসংখ্যান ও অবস্থা

গাজার শহরগুলোতে প্রায় ৬১ মিলিয়ন টন ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে রয়েছে। বহু এলাকা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জীবনযাত্রা চালানোর চেষ্টা চলছে। কবরস্থান ও ধ্বংসস্তূপই এখন জীবিতদের একমাত্র নিরাপদ স্থান।

শিশুদের শিক্ষা, চিকিৎসা এবং দৈনন্দিন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেরি হলে দীর্ঘমেয়াদে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে।

গাজায় কবরস্থানগুলো এখন শুধু মৃতদের নয়, জীবিতদেরও আশ্রয়স্থল। মানবিক ও সামাজিক সংকট ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তৎপরতা এবং ত্রাণ কার্যক্রম দ্রুত কার্যকর না হলে পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হবে।

এবার প্রশ্ন থেকে যায়—মানবিক সহায়তা পৌঁছানো ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কতটা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, এবং গাজার হাজারো ফিলিস্তিনি পরিবার কবে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে?

এম আর এম – ১৯১৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button