ইউএসএআইডিকে ‘সন্ত্রাসী সংস্থা’ আখ্যা দিয়ে বন্ধ করার দাবি ইলন মাস্কের
সংবাদটি আলোচনার কেন্দ্রে:
বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এবং টেসলা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এর মালিক ইলন মাস্ক সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডিকে (USAID) ‘সন্ত্রাসী সংস্থা’ আখ্যা দিয়ে এটি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁর এই মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
কেন এই সিদ্ধান্ত?
ইলন মাস্কের এই মন্তব্যের পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে। সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন কর্তৃক গঠিত ডিওজিই (DOGE) বিভাগের কর্মকর্তাদের ইউএসএআইডির সংরক্ষিত নথি দেখতে বাধা দেওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা দেখা দেয়। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের এই পদক্ষেপের পর সংস্থার দুই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জন ভুরহিস এবং ব্রায়ান ম্যাকগিলকে ছুটিতে পাঠানো হয়।
ইলন মাস্ক এই প্রসঙ্গে এক্সে লিখেছেন, “এটি বন্ধ করার সময় এসেছে।” তার এই মন্তব্য দেশজুড়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া অবস্থান:
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউএসএআইডি নিয়ে আরো কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তিনি দাবি করেন, এই সংস্থা “কিছু বদ্ধ উন্মাদ” দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশাসন চিন্তাভাবনা করছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, সরকারি অর্থের অপচয় রোধে ইউএসএআইডির কার্যক্রম সংকুচিত করার প্রয়োজন রয়েছে। এ অবস্থায় ইউএসএআইডিকে বন্ধ করার প্রস্তাব প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ইলন মাস্ক উভয়ের প্রশাসনিক কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইউএসএআইডি কি বন্ধ হবে?
এই বিতর্কের মধ্যে ইউএসএআইডির ওয়েবসাইট সম্প্রতি অফলাইনে চলে গেছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে সংস্থাটির একটি নতুন পেজ খোলা হয়েছে। এতে সংস্থাটিকে পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছে।
ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিস কুনস এক্সে এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুই সপ্তাহ ধরে ইউএসএআইডির কর্মীদের হয়রানি ও ছাঁটাই করছেন। এখন তাঁর দল এই সংস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।”
তিনি আরও বলেন, “ইউএসএআইডির কর্মীরা দেশপ্রেমিক আমেরিকান, যারা বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব প্রচার করে এবং আমাদের নিরাপদ রাখে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত আমাদের ঝুঁকির মুখে ফেলছে।”
গোপন নথি নিয়ে বিতর্ক:
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিরাপত্তা ছাড়পত্র না থাকায় ডিওজিইর কর্মকর্তাদের ইউএসএআইডির সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। যদিও ডিওজিইর সদস্য কেটি মিলার নিশ্চিত করেছেন যে যথাযথ অনুমতি ছাড়া কোনো গোপন নথিতে প্রবেশ করা হয়নি।
হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক স্টিভেন চিউং এ ঘটনার প্রতিবেদনকে ভুয়া খবর বলে উল্লেখ করেছেন।
নতুন প্রশাসনিক কাঠামো:
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউএসএআইডির ভবিষ্যৎ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ শুধু অর্থ সাশ্রয় নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা নীতির বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে এই প্রক্রিয়ায় সংস্থাটির কর্মীরা এবং অনেক আন্তর্জাতিক প্রকল্প ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
এই ঘটনায় ইলন মাস্কের প্রভাব নিয়েও ডেমোক্র্যাটরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচিত পদে না থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসনে মাস্কের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
ইউএসএআইডিকে ঘিরে বর্তমান উত্তেজনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। ইলন মাস্কের মন্তব্য এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।