
২৯ বছর পর সালমান শাহ হত্যা মামলায় নতুন গতি, আদালতের নির্দেশে আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাসহ রমনা থানা ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করার নির্দেশ।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যময় মৃত্যু হয় ঢালিউডের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহর। প্রায় তিন দশক পরে তার মৃত্যুর ঘটনায় নতুন মোড় এসেছে—আদালতের নির্দেশে আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। মামলাটি এখন একাধিক পর্যায়ে পুনরায় তদন্তাধীন।
ঘটনা ও নির্দেশনার বিস্তারিত
আদালতের নির্দেশে রমনা থানার কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগকে চিঠি দিয়েছে যাতে আসামিরা দেশ ছাড়তে না পারেন। ইতিমধ্যে ইমিগ্রেশন ও সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থাগুলোকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মামলার তদন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে; তাই আসামিদের বিদেশে যাওয়ার রক্ষা পাওয়া উচিত নয়।
মামলার বাদীপক্ষ এবং আইনজীবীরা বলছেন, এই পদক্ষেপ আসামিদের কোন পথে পালিয়ে যায়—তার ওপর একটি গুরুত্বপূর্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। আসামিদের তালিকা ইতিমধ্যে আদালতে অনুমোদিত হয়েছে।
মামলার পূর্বপট ও বিস্তারিত
সালমান শাহ (মূল নাম: চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার) ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার নতুন ঈসাকটন এলাকায় রহস্যজনকভাবে মারা যান। মৃত্যুর প্রাথমিক কারণ ছিল ‘অপমৃত্যু’ বা ‘আত্মহত্যা’ দাবি।
তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ প্রথমে এক অপমৃত্যু মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি দাবি করেন, ছেলে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই হত্যার মতো মর্যাদা দিয়ে মামলাটিকে পুনরাবেদনের আবেদন করেন।
পরে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা যেমন CID, Police Bureau of Investigation (PBI) ইত্যাদি গঠন করা হয়। ২০২০ সালে PBI তাদের ৬০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয়, যা দাবি করে সালমান আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু বাদীপক্ষ এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আসছিল।
২০২৫ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলাটিকে হত্যা হিসেবে গ্রহণ করে রমনা থানাকে তদন্তকার্য দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন।
আসামি ও বাদীপক্ষের দাবি
মামলায় মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন: সালমানের সাবেক স্ত্রী সামিরা হক, প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, অভিনেতা ডন, লতিফা হক লুসি, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, মেফিয়ার বিউটি সেন্টারের রুবি, আবদুস সাত্তার, সাজু ও রিজভী আহমেদ ফরহাদ।
বাদীপক্ষের আইনজীবী বক্তব্য দিচ্ছেন—“আমরা শুরু থেকেই বলেছি, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেননি, হত্যা হয়েছে।” সালমানের মা নীলা চৌধুরী অবশ্য বলছেন, “আমার সন্তান পরিকল্পিতভাবে খুন হয়েছে। যারা আত্মহত্যা বলার চেষ্টা করেছে, তাদেরকেও বিচার করার দাবি রয়েছে।”
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপট
আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আদালতের নির্দেশের পরে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। বাদীপক্ষে ও আইনজীবীরা মনে করছেন, ছাড়পত্র যদি দেয়া হয় অথবা আসামিরা বিদেশ যেতেই পারলে মামলার কার্যক্রম ব্যাহত হবে। দেশত্যাগ রোধ করতে ইমিগ্রেশন ও সীমান্ত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে আদালত আগামী ৭ ডিসেম্বর তার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে।
প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা
এই নির্দেশনা ও মামলার নতুন গতিবিধি সিনেমা এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক ধরনের আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জনপ্রিয় তারকাকে ঘিরে দুই ভেবেবিচার—আত্মহত্যা না হত্যা—মূল আলোচ্য বিষয় হয়ে আছে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত সাধারণ নাগরিকের মধ্যে সাধারণত আইনের প্রতি বিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
তবে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষদের সামনে রয়েছে চ্যালেঞ্জ:
- আসামিদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার রুখে দেওয়া ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা।
- তদন্ত দ্রুততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
- দীর্ঘ সময় ধরে মামলাটি প্রক্রিয়াধীন থাকার কারণে সাক্ষীর স্মৃতি, প্রমাণের অবস্থা ইত্যাদি ঝুঁকিতে রয়েছে।
- সামাজিকভাবে বিষয়টি দ্রুত আলোচনায় থাকলেও আইনগত প্রতিবন্ধকতা ও প্রশাসনিক জটিলতা রয়েছে।
তাদের জন্য যারা এই সংবাদ পড়ছেন—২৯ বছর পর নয়া অভিগম্যতাসহ আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ এসেছে। কিন্তু এখনো পথ বহু দাড়িয়ে আছে। অবশিষ্ট সময়ে সামনে আসার অধিকার রয়েছে তথ্য ও সাক্ষ্যের। জনমনে প্রশ্ন রয়েছে—এই মামলার সত্যিটি কি স্পষ্ট হবে? যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে একটি শক্তিশালী, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত অপরিহার্য।
আপনাদের কাছে প্রশ্ন রেখে শেষ করতে ইচ্ছে করছে—এই ধরনের নির্দেশ যথার্থভাবে কার্যকর হবে কি না? আর কতটা দ্রুত হবে ন্যায়বিচার?
এম আর এম – ১৯১৩,Signalbd.com