বাংলাদেশ

টঙ্গীতে ইমামকে গুমের প্রতিবাদ জানিয়ে যা বলল হেফাজত

Advertisement

গাজীপুরের টঙ্গী থেকে নিখোঁজ ইমাম মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজীকে গুমের অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটি বলেছে, ধর্মীয় নেতা ও আলেমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা দেশের মুসলমানদের ওপর গভীর আঘাত। তারা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছে।

গুমের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হেফাজতের

গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানার বিটিসিএল টিএন্ডটি কলোনি জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজীকে (৬০) গুমের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজেদুর রহমান বলেন, “দেশে একের পর এক আলেম-উলামাকে টার্গেট করা হচ্ছে। একজন ধর্মপ্রাণ ইমামকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনা ইসলামী সমাজে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।”

হেফাজত নেতারা দাবি করেন, টঙ্গী এলাকার ওই ইমামকে কিছু উগ্র গোষ্ঠীর সদস্যরা ‘ধর্মীয় বক্তব্যে সত্য প্রকাশের কারণে’ পরিকল্পিতভাবে গুম করে। পরে তাকে সীমান্তবর্তী পঞ্চগড়ে শিকলবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তারা সরকারের কাছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

বিবৃতিতে হেফাজতের অভিযোগ

হেফাজতের বিবৃতিতে বলা হয়, দেশে এমন কিছু চক্র সক্রিয় আছে যারা ইসলামবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত এবং দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তারা দাবি করে, “মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজী সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে বারবার হুমকি পেয়েছিলেন। পরপর কয়েকটি চিঠি পাঠিয়ে ভয় দেখানো হয়, অবশেষে তাকে অপহরণ করা হয়।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একজন আলেমকে গুম করার ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত শত্রুতার নয়, বরং এটি ইসলাম ও মুসলিম সমাজের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। সংগঠনটি ঘটনাটিকে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতারও প্রতিফলন বলে উল্লেখ করে।

সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

বিবৃতিতে হেফাজত ইসলাম অভিযোগ করে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের ধর্মীয় নেতাদের ওপর হামলা, হুমকি ও নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে, কিন্তু এর অধিকাংশ ঘটনার বিচার হয়নি। তারা বলেন, “যখন কোনো সংখ্যালঘু গোষ্ঠী আক্রান্ত হয়, তখন সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু মুসলমানদের ধর্মীয় নেতা আক্রান্ত হলে কোনো সাড়া মেলে না। এ বৈষম্যমূলক আচরণ দেশের জনগণকে হতাশ করছে।”

নেতারা আরও বলেন, “দেশের সংবিধান সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করলেও, ধর্মীয় নেতাদের ওপর হামলা ও গুমের ঘটনায় সরকারের নীরবতা উদ্বেগজনক।”

টঙ্গীর ঘটনা ও উদ্ধার অভিযান

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ভোরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হেলিপ্যাড এলাকার পাশ থেকে ইমাম মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজীকে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা গাছের সঙ্গে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাকে দেখতে পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। পরে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এর এক দিন আগেই গাজীপুরের টঙ্গী থেকে তিনি নিখোঁজ হন। পরিবারের অভিযোগ, তিনি জুমার নামাজ শেষে বাসায় ফেরেননি এবং তার মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। পরিবারটি প্রথমে থানায় সাধারণ ডায়েরি করলেও, কোনো তথ্য না পেয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকে।

ইমামের বক্তব্য ও প্রাথমিক তদন্ত

চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুফতি মহিবুল্লাহ জানিয়েছেন, কিছু অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি তাকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় এবং নির্যাতন করে। তিনি বলেন, “আমি কারও ক্ষতি করিনি। শুধু সত্য কথা বলেছি, মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছি।”

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। গাজীপুর ও পঞ্চগড় দুই জেলার পুলিশ যৌথভাবে ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে। এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি, তবে সন্দেহভাজন কয়েকজনের বিষয়ে নজরদারি চলছে।

ধর্মীয় সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া

হেফাজতের পাশাপাশি আরও কয়েকটি ইসলামি সংগঠন এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। তারা মনে করে, দেশের ধর্মীয় নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বাংলাদেশ উলামা পরিষদ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “একজন ইমামকে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া ও পরে গুম করার ঘটনা কোনো সভ্য সমাজে মেনে নেওয়া যায় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে।”

ধর্মীয় সম্প্রীতির সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্মীয় বিভাজন ও ভুল বোঝাবুঝির কারণে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ নাজুক হয়ে উঠছে। ইমাম গুমের মতো ঘটনা মুসলিম সমাজে ক্ষোভ সৃষ্টি করছে, যা ভবিষ্যতে সামাজিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “ধর্মীয় ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কোনো পক্ষই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ পাবে না, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।”

হেফাজতের আহ্বান

হেফাজতের নেতারা জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “আমরা আইনের প্রতি আস্থা রাখি। তবে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে জনগণ ক্ষোভে ফেটে পড়বে।” সংগঠনটি দেশের আলেম-ওলামা, ছাত্র ও সাধারণ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানায় যেন তারা আইনের পথে ন্যায়বিচারের দাবি তোলে এবং কোনো উসকানিতে না জড়ায়।

টঙ্গীর ইমাম গুমের ঘটনায় সারা দেশে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। হেফাজতের প্রতিবাদ ও অভিযোগের পর প্রশাসনও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছে। এখন সবার দৃষ্টি তদন্তের ফলাফলের দিকে। সত্যিই যদি কোনো সংগঠিত গোষ্ঠী এই ঘটনার পেছনে থাকে, তবে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঠেকানো কঠিন হবে।

এম আর এম – ১৯১০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button