আঞ্চলিক

মর্গে রাখা তরুণীর মৃতদেহ ধর্ষণ; ডুম গ্রেফতার

Advertisement

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা এক তরুণীর মৃতদেহ ধর্ষণের ঘটনায় আবু সাইদ (১৯) নামে এক ডুমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় হালুয়াঘাট থানার উপ-পরিদর্শক জামাল বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

ঘটনার বিস্তারিত

ডুম আবু সাইদ হালুয়াঘাট উপজেলার খন্দকপাড়া গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে। সে হালুয়াঘাট থানার মর্গে মরদেহ আনা-নেওয়ার কাজ করত। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত রোববার রাতে হালুয়াঘাটে এক তরুণী ফাঁসিতে ঝুঁলে আত্মহত্যা করেন। হালুয়াঘাট থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে রাখে।

পরদিন সকাল ১১টায় ডুম আবু সাইদ ও তার এক সহযোগী মৃতদেহ মর্গে নিয়ে আসে। তারা চাবি নিয়ে মর্গে প্রবেশ করেন এবং পরে আবারও ফিরে এসে মৃতদেহ ধর্ষণ করেন। মর্গের কর্তব্যরত ডুম আধাঘণ্টা পর তাদেরকে মর্গে ঘুমাতে দেখে, লাইট জ্বালিয়ে ডাক্তারকে খবর দেয়। ডাক্তার এসে ময়নাতদন্তের মাধ্যমে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পুলিশ অভিযান ও গ্রেফতার

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ জসিম উদ্দিন জানান, ডাক্তার ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করলে হালুয়াঘাট থানায় খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ অভিযুক্ত আবু সাইদ ও তার সহযোগীকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে আবু সাইদ ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শিবিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”

ঘটনার প্রভাব ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

মর্গে রাখা মৃতদেহের প্রতি এমন নৃশংসতা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে যথেষ্ট উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত বিচার চেয়েছেন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না করা পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে বলেছেন, মর্গে প্রবেশ ও চাবি ব্যবস্থাপনা আরও কঠোর করা জরুরি।

বাংলাদেশে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মর্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা শিথিল থাকায় অনৈতিক ও অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে মৃতদেহের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত দায়িত্বের অবহেলা সম্প্রতি একটি বড় ইস্যু হিসেবে উঠে এসেছে।

ময়মনসিংহের এই ঘটনার আলোকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলিতে নিরাপত্তা প্রটোকল কঠোর করা না হলে এমন নৃশংস ঘটনা পুনরায় ঘটতে পারে।

আইনগত পদক্ষেপ

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হওয়ায় আদালত দ্রুত কার্যক্রম শুরু করেছে। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে এবং আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনার দ্রুত বিচার হবে যাতে সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয় এবং এমন ঘটনা রোধ করা যায়।

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃতদেহ ধর্ষণের মতো ঘটনা অপরাধের মধ্যে সর্বোচ্চ ধরনের অপরাধের মধ্যে গণ্য হয়। “এই ঘটনার সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে যাতে অন্য কেউ এমন অপরাধের দিকে নজর না দেয়,” বলেন একজন বিশেষজ্ঞ।

সোশ্যাল ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা আরও যোগ করেছেন, হাসপাতাল ও মর্গের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করা না হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটতে বাধা দেওয়া সম্ভব হবে না।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তরুণীর মৃতদেহ ধর্ষণের ঘটনা দেশের নৈতিক ও সামাজিক অনুভূতিকে ব্যথিত করেছে। অভিযুক্ত আবু সাইদ ও তার সহযোগীর গ্রেফতারের মাধ্যমে পুলিশ প্রাথমিক ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হাসপাতাল ও মর্গের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা না হলে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা পুনরায় ঘটতে পারে।

এম আর এম – ১৯০৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button