
চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম ২১ দিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৮৫ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এই তথ্য জানিয়েছেন। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবাসী আয়ে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে।
রেমিট্যান্সের বিস্তারিত পরিসংখ্যান
অক্টোবরের প্রথম ২১ দিনে দেশে আসা রেমিট্যান্সের দৈনিক গড় আনুমানিক ৮ কোটি ৮২ লাখ ডলার। বিশেষত ২১ অক্টোবর একদিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই পরিমাণ প্রায় ৯০৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা (১ ডলারে ১২২.২৫ টাকা ধরে)।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪.৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রবাসী আয়ের পেছনের কারণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক বৃদ্ধি মূলত বৈধ চ্যানেলের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে। দেশে অর্থ পাঠানোর জন্য ব্যাংকিং চ্যানেল এবং অনুমোদিত ফিন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সম্প্রসারিত হওয়ায় হুন্ডি বা অবৈধ মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ কমেছে।
একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকার কারণে প্রবাসীরা বৈধ পথে সহজেই রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও দৃঢ় হবে।
বর্তমানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২.১০ বিলিয়ন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী এই পরিমাণ ২৭.৩৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থনীতিবিদদের মতে, রেমিট্যান্স প্রবাহে বৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করবে এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে।
প্রভাবিত খাত ও সাধারণ মানুষের উপকার
রেমিট্যান্স বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়ে দেশের অর্থনীতি এবং পরিবারগুলোর জীবনে। প্রবাসী আয়ের বৃদ্ধি ঘরোয়া বাজারে খরচ বাড়ায়, যা অর্থনীতিতে প্রবাহ বৃদ্ধি করে। পরিবারের আয় বাড়ার ফলে শিক্ষার খরচ, স্বাস্থ্যসেবা এবং দৈনন্দিন জীবনের মান উন্নয়নে সহায়তা মিলছে।
বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এটি একটি বড় সহায়তা। দেশের গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের পরিবারগুলোর জীবনযাত্রায় প্রভাব পরেছে, কারণ তারা প্রায়ই প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে নির্ভরশীল।
গত অর্থবছরে প্রবাসীরা দেশে ৩০.৩২ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩ হাজার ৩২ কোটি মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ এক অর্থবছরে প্রাপ্ত রেকর্ড। বিশেষ করে মার্চ মাসে ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, যা এখনো একক মাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড। এরপরও মাসিক রেমিট্যান্স প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের বেশি রেকর্ড করেছে।
এই ধারাবাহিকতা দেশের অর্থনৈতিক দৃঢ়তা এবং প্রবাসীদের আস্থা প্রতিফলিত করে।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, রেমিট্যান্সের ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। একজন বিশ্লেষক বলেছেন, “প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, যা দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করছে। সরকারের অর্থনৈতিক নীতি ও ব্যাংকিং চ্যানেলের সুবিধা বৃদ্ধির ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে।”
এছাড়াও, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার ফলে বিদেশি বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
অক্টোবরের প্রথম ২১ দিনে প্রবাসী আয়ের এই ধারা দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি ও দৃঢ়তার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বৈধ চ্যানেলের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও স্থিতিশীল হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, চলতি অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও দৃঢ় হবে এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব থাকবে।
এম আর এম – ১৯০৩,Signalbd.com