
কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার হওয়া এক পর্যটকের হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দুই নারীসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত
বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পর্যটক মোহাম্মদ রুবেল (৪২)। তিনি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার আব্দুস লতিফের ছেলে।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত রুবেলকে অসুস্থ অবস্থায় কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনের “হাইপেরিয়ান হোয়াইট প্যালেস” হোটেল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি ইলিয়াছ খান জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রুবেলের দুই বন্ধু মো. মামুন (৪৮) ও মো. মোতালেব (৩৬), এবং স্থানীয় দুই তরুণী মর্জিনা আক্তার (১৮) ও সাবিনা আক্তার (১৭) কে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট
হোটেল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত ১৫ অক্টোবর রুবেল ব্যক্তিগত গাড়িতে কক্সবাজার আসেন এবং “হাইপেরিয়ান হোয়াইট প্যালেস”-এ অবস্থান নেন। চালক পরে ফিরে গেলেও রুবেল কক্সবাজারেই অবস্থান করছিলেন।
২০ অক্টোবর তার চার বন্ধু নওগাঁ থেকে এসে একই হোটেলে ওঠেন। মঙ্গলবার রাতে তারা একসঙ্গে হোটেলের ৪০৭ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছিলেন। ভোররাতে রুবেল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে, কক্ষে থাকা দুই নারী ও দুই বন্ধু তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা ও তদন্তের অগ্রগতি
কক্সবাজার সদর থানার ওসি ইলিয়াছ খান বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অপেক্ষা করা হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে রুবেলের শেষ রাতের কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি মাদকসংক্রান্ত নাকি অন্য কোনো কারণে, সেটি নিশ্চিত হতে সময় লাগবে।
পর্যটন নগরীতে বারবার এমন ঘটনা
কক্সবাজারে এর আগে একাধিক পর্যটকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, “প্রতি মৌসুমে কিছু পর্যটক মদ্যপান বা অচেনা মানুষের সঙ্গে মিশে এমন বিপদের মুখে পড়ছেন।”
কক্সবাজার পর্যটন ব্যবসায়ীরা মনে করেন, হোটেলগুলোতে অতিথিদের নিরাপত্তা জোরদার করা উচিত। হোটেল কর্তৃপক্ষের নজরদারি ও অতিথি তালিকা যাচাই করলে অনেক ঝুঁকি কমে যাবে।
পর্যটক নিরাপত্তায় বাড়তি পদক্ষেপ জরুরি
স্থানীয় সমাজকর্মী ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক আনিসুর রহমান বলেন, “দেশের অন্যতম পর্যটন শহরে বারবার এমন মৃত্যু পর্যটনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। হোটেল মালিক সমিতি ও প্রশাসনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে যেন অতিথিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি হোটেলে পর্যটকদের নিবন্ধন তথ্য ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ ও রুমে সিসিটিভি কাভারেজ থাকা বাধ্যতামূলক করা উচিত।”
হাসপাতাল সূত্র ও পরবর্তী পদক্ষেপ
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানান, রুবেলকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। তার শরীরে মদের গন্ধ পাওয়া যায়। তবে এটি মৃত্যুর মূল কারণ কি না, সেটি নিশ্চিত করতে ল্যাব রিপোর্ট প্রয়োজন।
মৃতদেহ বর্তমানে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
রহস্যজনক এই মৃত্যু এখন কক্সবাজারে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ময়নাতদন্তের ফলাফল না আসা পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে এ ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠেছে—পর্যটন নগরীতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও হোটেল কর্তৃপক্ষ কতটা প্রস্তুত?
এম আর এম – ১৮৯৬,Signalbd.com