পিটার বাটলারের ইগো বনাম সাবিনাদের জিদ: নারী ফুটবলের ভবিষ্যৎ কোন পথে?
বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের ২৬ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফিফা প্রীতি ম্যাচ ও ২ মার্চ একটি আন-অফিসিয়াল ম্যাচ খেলার কথা রয়েছে। তবে চলমান সংকটের কারণে সফরের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার জানিয়েছেন, “আরব আমিরাত সফর হবে, দল একটা যাবেই।”
অর্থাৎ, সিনিয়র ফুটবলাররা যদি তাদের অবস্থানে অনড় থাকেন, তাহলে নতুন খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গঠন করে সফর চালিয়ে যাবে বাফুফে। আবার যদি কোচ পিটার বাটলার পদত্যাগ করেন, তাহলে পুরো শক্তির দল নিয়েই সফরে যেতে পারে বাংলাদেশ।
নারী ফুটবলের সংকট: অভিযোগ বনাম প্রতিক্রিয়া
জাতীয় দলের ১৮ সিনিয়র ফুটবলার লিখিতভাবে ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। কোচের বিরুদ্ধে অসন্তোষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকেই শুরু হলেও তা আরও প্রকট হয়েছে সম্প্রতি। সিনিয়র খেলোয়াড়রা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—তাদের একমাত্র দাবি, “পিটার তুই কবে যাবি?”
অন্যদিকে, কোচ বাটলার অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ইঙ্গিত দিচ্ছেন, সিনিয়রদের ছাড়াও তার কাছে যথেষ্ট বিকল্প রয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো, দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক রুপনা চাকমা, সেরা খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমাদের বিকল্প এখনো গড়ে ওঠেনি।
বাফুফের অবস্থান ও দোদুল্যমানতা
বাফুফে এখন ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ অবস্থানে। নতুন কমিটি গঠন করে সমাধান খোঁজার চেষ্টা হলেও এটি সংকটের শুরুর সময়েই করা উচিত ছিল। সিনিয়র খেলোয়াড়দের বিদ্রোহের মূল কারণ পিটার বাটলারের পুনঃনিয়োগ। অথচ বাফুফে তাদের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।
সাবিনা খাতুন, মাসুরা পারভীন, মারিয়ারা এ নিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। সাবিনা স্পষ্ট বলেছেন, “এটা আমাদের আত্মসম্মানের লড়াই।” তাদের মতে, কোচের অনুশীলন পদ্ধতি ও মনোভাব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ ছিল, কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি।
নারী ফুটবলের ভবিষ্যৎ কোন পথে?
বর্তমানে নারী ফুটবলে দ্বন্দ্ব চরমে। একদিকে কোচের অনমনীয় মনোভাব, অন্যদিকে খেলোয়াড়দের দৃঢ় অবস্থান—এই দুইয়ের সংঘাতে পুরো দল বিপর্যস্ত। খেলোয়াড়রা নিজেদের দক্ষতার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী, তারা বলছেন, “যে কেউ ডাগআউটে দাঁড়ালেই আমরা রেজাল্ট এনে দিতে পারবো।”
তবে এটা কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। বাফুফে কর্মকর্তাদের কেউ কেউ মনে করেন, কোচের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হওয়া উচিত, আবার কেউ কেউ বলছেন, “এই কোচকে আবার নিয়োগ দেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।”
এই সংকট দ্রুত সমাধান না হলে বাংলাদেশের নারী ফুটবলের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হয়ে ওঠার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করার বদলে দল এখন অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত। এই সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশ নারী ফুটবলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।