প্রযুক্তি

ডিপসিকের চাপে ওপেন-সোর্স এআই নিয়ে ভাবছে ওপেনএআই

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির দুনিয়ায় প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হচ্ছে। সম্প্রতি চীনা এআই গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিপসিক তাদের ওপেন-সোর্স মডেল ‘আর১’ (R1) উন্মুক্ত করার পর এআই শিল্পে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এরই প্রতিক্রিয়ায়, জনপ্রিয় এআই চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি-এর নির্মাতা ওপেনএআই এখন নিজেদের প্রযুক্তির কিছু অংশ ওপেন-সোর্স করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।

সম্প্রতি রেডিটের ‘আস্ক মি অ্যানিথিং’ সেশনে একজন ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে ওপেনএআই’র সিইও স্যাম অল্টম্যান স্বীকার করেন যে, প্রতিষ্ঠানটির কিছু প্রযুক্তি উন্মুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা চলছে। তবে তিনি এটাও জানান যে, এটি ওপেনএআই’র সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নয়।

ডিপসিকের উত্থানে চাপে ওপেনএআই

ডিপসিকের আর১ মডেলটি মাত্র ৫.৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তৈরি হলেও এটি উন্নত পারফরম্যান্স দিতে সক্ষম। অন্যদিকে, ওপেনএআই’র সর্বশেষ জিপিটি-৪ মডেল তৈরি করতে খরচ হয়েছে ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। স্বল্প খরচে কার্যকরী এআই মডেল তৈরি করে ডিপসিক ইতোমধ্যেই প্রযুক্তি বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

ডিপসিকের অন্যতম সুবিধা হলো এটি সম্পূর্ণ ওপেন-সোর্স। ফলে যেকোনো ডেভেলপার নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী এটি কাস্টমাইজ করতে পারছেন একেবারে বিনামূল্যে। অন্যদিকে, বর্তমান এআই ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় সব মডেলই প্রোপ্রাইটারি বা মালিকানাধীন। ব্যতিক্রম হিসেবে মেটার লামা (LLaMA) মডেলগুলোর কিছু অংশ উন্মুক্ত থাকলেও, সেগুলোতে নানা লাইসেন্সিং সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

একসময় ‘ওপেন-সোর্স’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ওপেনএআই

২০১৫ সালে অ-লাভজনক (Non-Profit) প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল ওপেনএআই। তখন তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সাধারণ মানুষের স্বার্থে তাদের গবেষণা ও ডেটা উন্মুক্ত করা হবে। কিন্তু ২০২২ সালে চ্যাটজিপিটি বাজারে আসার পর প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত বাণিজ্যিক মডেলে রূপান্তরিত হয়

ওপেনএআই’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক সম্প্রতি স্যাম অল্টম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন যে, তিনি ওপেনএআই’র মূল প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন এবং প্রতিষ্ঠানটি এখন সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে

ওপেন-সোর্স না করার কারণ ও নতুন বাস্তবতা

ওপেনএআই এখন পর্যন্ত তাদের মডেলগুলোর বিস্তারিত তথ্য গোপন রেখেছে দুটি কারণে—

  1. বাজার প্রতিযোগিতা: বর্তমানে এআই প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ ও প্রতিযোগিতা এতটাই তীব্র যে, উন্মুক্ত করলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই প্রযুক্তি গ্রহণ করতে পারে।
  2. সুরক্ষা ঝুঁকি: ওপেন-সোর্স করলে খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে।

কিন্তু ডিপসিকের এআই মডেলের নিম্ন খরচ ও ওপেন-সোর্স সুবিধা এখন এআই শিল্পের গতিপথ পরিবর্তন করে দিতে পারে। ডেভেলপাররা কম খরচে এআই টুল বানাতে চাইলে ডিপসিকের ওপেন-সোর্স মডেল প্রথম পছন্দ হয়ে উঠতে পারে। ঠিক যেমন অ্যান্ড্রয়েডের ওপেন-সোর্স নীতির কারণে এটি মোবাইল ওএস দুনিয়ায় শীর্ষস্থানে পৌঁছে গেছে।

ওপেনএআই’র সম্ভাব্য কৌশল

প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, ওপেনএআই তাদের কিছু মডেল উন্মুক্ত করলেও চ্যাটজিপিটি’র প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন চালিয়ে যেতে পারে। এতে তারা আয়ের পথও খোলা রাখতে পারবে, আবার এআই খাতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে

সুতরাং, ডিপসিকের আগমনে ওপেনএআই’র ওপেন-সোর্স নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজন পড়েছে। ভবিষ্যতে তারা কতটুকু উন্মুক্ত করবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button