ফ্যাক্ট চেক

৮ ভরি স্বর্ণের বিনিময়ে তালাক নয়: আবু ত্বহা আদনানের স্পষ্ট ব্যাখ্যা

Advertisement

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা উস্তাদ আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান ও তার সাবেক স্ত্রী সাবিকুন নাহার-এর পারিবারিক বিষয় সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বিশেষ করে “৮ ভরি স্বর্ণের বিনিময়ে বিবাহবিচ্ছেদ” — এমন একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ায় অনেকে বিভ্রান্ত হয়।

অবশেষে, এই বিষয়ে নিজের অবস্থান ও সত্য ঘটনা স্পষ্ট করেছেন স্বয়ং আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর ২০২৫) নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি পোস্টে তিনি পুরো ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন।

পারিবারিক বিষয় শারীয়তসম্মতভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে

আবু ত্বহা তার পোস্টে লেখেন—

“আমার ও আমার প্রাক্তন স্ত্রী সাবিকুন নাহারের পারিবারিক বিষয়গুলো দেশের সম্মানিত উলামায়ে কেরামের পরামর্শ ও মাশওয়ারার ভিত্তিতে শরিয়ত মোতাবেক নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, বিষয়টি এখন সম্পূর্ণ সমাধান হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, উভয় পক্ষই মুরব্বিদের মাজলিসের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং এর বাইরে কোনো অনানুষ্ঠানিক সমঝোতা বা আর্থিক বিনিময় হয়নি।

খুলা তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছেদ

তার পোস্টে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়—

১️⃣ উলামায়ে কেরামের উপস্থিতিতে আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান তার প্রাক্তন স্ত্রীকে খুলা তালাকের প্রস্তাব দেন, যা সাবিকুন নাহার গ্রহণ করেন।
এর ফলে তাদের মধ্যে আর কোনো বৈবাহিক সম্পর্ক অবশিষ্ট নেই।

২️⃣ মোহরানা সম্পূর্ণ পরিশোধিত ছিল— এ বিষয়ে কোনো দেনা-পাওনা বা বিরোধ নেই।

৩️⃣ সাবিকুন নাহার মিরপুরের Taw Haa Zin Nurain Islamic Center-এর উন্নয়ন প্রকল্পে পূর্বে প্রায় ৫ ভরি স্বর্ণ এবং আরও প্রায় ৩ ভরি স্বর্ণ ও কিছু নগদ অর্থ দেন, যা তিনি “ফেরতযোগ্য ধার” হিসেবে প্রদান করেছিলেন।
এই অর্থ ফেরতের সময়সীমা উলামায়ে কেরাম নির্ধারণ করেছেন, এবং প্রতিষ্ঠান সেই অনুযায়ী তা পরিশোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

৮ ভরি স্বর্ণের বিনিময়ে তালাকের গুজব ভুয়া

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম, বিশেষত ফেসবুক ও ইউটিউবে, কিছু পেজ ও ব্যক্তিগত আইডি থেকে দাবি করা হয়—
আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান তার স্ত্রীকে ৮ ভরি স্বর্ণের বিনিময়ে তালাক দিয়েছেন

কিন্তু আদনানের বক্তব্যে এটি সম্পূর্ণ গুজব ও ভিত্তিহীন বলে স্পষ্ট হয়।

তিনি লেখেন—

“৮ ভরি স্বর্ণের বিনিময়ে তালাকের যেসব প্রচারণা চলছে, তা একেবারেই সত্য নয়। আমার বা আমার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ ধরনের প্রচারণার কোনো সম্পর্ক নেই।”

তিনি সবাইকে সতর্ক করে বলেন—

“আপনারা কেউ কোনো গুজবে প্রভাবিত হবেন না এবং কারও প্রতি মিথ্যা অভিযোগ বা অপবাদ আরোপ করবেন না।”

সন্তানদের বিষয়েও শরিয়াসম্মত সিদ্ধান্ত

মুরব্বিদের মাজলিসে শুধু আর্থিক নয়, সন্তানদের হেফাজত সম্পর্কেও শরিয়াসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উভয় পক্ষই সেই সিদ্ধান্তে একমত হন।
এর ফলে বিষয়টি এখন আইনি ও ধর্মীয়ভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে, যা উভয় পরিবারের জন্য শান্তিপূর্ণ সমাধান হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা ও গুজবের ঢেউ

এই দম্পতির ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরণের মন্তব্য ও ভিডিও প্রচারিত হয়।
বিশেষত ইউটিউব ও ফেসবুকের কিছু পেজে “৮ ভরি স্বর্ণের বিনিময়ে তালাক”, “স্ত্রীকে বিক্রি করে দিলেন আবু ত্বহা” ইত্যাদি শিরোনামে বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়ে।

এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহল বাড়লেও, অনেকেই যাচাই-বাছাই না করে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে শুরু করেন।
এর ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

উলামায়ে কেরামদের ভূমিকা প্রশংসনীয়

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশসেরা কয়েকজন ইসলামিক স্কলার, মুরব্বি ও আলেম একত্র হয়ে বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের উদ্যোগ নেন।
তারা উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনেন এবং শরিয়াসম্মত উপায়ে সমাধান দেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন একটি সংবেদনশীল পারিবারিক বিষয়কে ধর্মীয় পরামর্শের মাধ্যমে সমাধান করা অত্যন্ত ইতিবাচক উদ্যোগ।
এর ফলে পরিবার, সমাজ ও ধর্মীয় মূল্যবোধ— তিনটি ক্ষেত্রেই ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।

আবু ত্বহা আদনানের বার্তা তার অনুসারীদের প্রতি

পোস্টের শেষে আবু ত্বহা তার অনুসারীদের উদ্দেশে অনুরোধ করেন—

“এই বিষয়ে নতুন করে কোনো আলোচনা বা বিতর্ক না করে, বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধান হয়েছে— একে সম্মান দিন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দিন।”

এই বক্তব্যে তিনি স্পষ্ট করে দেন, তিনি চান না তার বা তার পরিবারের বিষয়টি নিয়ে আর কোনো মিডিয়া ট্রায়াল বা অনলাইন বিতর্ক চলুক।

আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান: সংক্ষিপ্ত পরিচয়

উস্তাদ আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান বাংলাদেশের ইসলামিক দাওয়াত অঙ্গনের অন্যতম পরিচিত মুখ।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী বক্তৃতা, তাফসির মাহফিল ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

তিনি Taw Haa Zin Nurain Islamic Center-এর প্রতিষ্ঠাতা, যা মূলত ইসলামিক শিক্ষা, দাওয়াত, হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমে যুক্ত।

২০২১ সালে একসময় তিনি রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন, যা নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরে তিনি ফিরে এসে জানান, ব্যক্তিগত কারণে কিছুদিন আড়ালে ছিলেন।
সেই সময় থেকেই তিনি দেশ-বিদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন।

পারিবারিক বিরোধ ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা: সামাজিক দায়িত্ব

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জনপ্রিয় ব্যক্তিদের পারিবারিক জীবনের ঘটনা অনেক সময় সামাজিক আলোচনায় আসে।
তবে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে অযথা প্রচার বা গুজব ছড়ানো শুধু নৈতিকতাবিরোধী নয়, বরং আইনগত অপরাধের পর্যায়েও পড়তে পারে।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘Digital Security Act’ অনুযায়ী কারও ব্যক্তিগত জীবনের তথ্য বিকৃতি বা অপপ্রচার করলে জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

তাই সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের উচিত—
যাচাই ছাড়া কোনো তথ্য শেয়ার না করা,
মিথ্যা প্রচারণায় অংশ না নেওয়া,
এবং যেকোনো পারিবারিক বিষয়ে সংযত থাকা।

উস্তাদ আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান ও সাবিকুন নাহারের দাম্পত্য সম্পর্ক এখন অতীত।
তবে তারা উভয়েই ধর্মীয় ও সম্মানজনক উপায়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেছেন — যা সমাজের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করে।

“৮ ভরি স্বর্ণের বিনিময়ে তালাক” — এই গুজবের অবসান ঘটিয়ে আদনান নিজেই দেখিয়েছেন যে,
সত্য ও ধৈর্যই যেকোনো সংকটের প্রকৃত সমাধান।

MAH – 13414 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button