
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। রপ্তানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এই তথ্য সাংবাদিক সম্মেলনে জানান।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ও নিয়ন্ত্রণ
শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিস, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী এবং বিজিবি মিলিয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। প্রথমে চারটি ইউনিট কাজ শুরু করলেও পরে ২৮টি ইউনিট সংযুক্ত হয়। বিমানবাহিনীর ফায়ার ইউনিটসহ ১৩টি স্টেশন ও ৩৭টি ইউনিটের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুনের ঘটনায় তৈরি পোশাক, বস্ত্রকল, ওষুধ, চামড়া, কৃষিপণ্য, ফলমূল ও হিমায়িত খাদ্যসহ বিভিন্ন রপ্তানিখাতের পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইএবি’র উদ্বেগ ও দাবি
ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডে স্পষ্ট হয়েছে কার্গো ভিলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর নয়। নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে কেবল ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়নি, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত, কারণ দীর্ঘদিন ধরে কার্গো ভিলেজে নিরাপত্তাহীনতা, গুদাম ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থাপনা ও মালামাল চুরির অভিযোগ জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
ইএবি এ ঘটনায় দাবি করেছে, ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের বিমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। বিমার বাইরে থাকা পণ্যের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ তহবিল গঠন করে ক্ষতিপূরণ এবং সহায়তা নিশ্চিত করার প্রয়োজন।
ক্ষতির পরিমাণ ও প্রভাব
মোহাম্মদ হাতেম জানান, অগ্নিকাণ্ডে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ৩২টি ওষুধ প্রতিষ্ঠান ২০০ কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ এখনও বেড়ে যেতে পারে।
বিমানবন্দর কার্গো ভিলেজে নিরাপত্তা ও গুদাম ব্যবস্থার ঘাটতি ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ আরও বাড়াচ্ছে। বিদেশি ক্রেতারা রপ্তানি পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হতে পারেন, যা ভবিষ্যতে রপ্তানি চুক্তি ও অর্ডারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
সংবাদ সম্মেলনে ইএবি ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডটি যথাযথ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে।
এছাড়াও তারা কার্গো ভিলেজের আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, ওষুধ শিল্পের জন্য আলাদা শীততাপনিয়ন্ত্রিত গুদাম স্থাপন, নিরাপদ দূরত্বে রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ এবং সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর গুদাম ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞ মতামত ও বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কার্গো ভিলেজে এই ধরনের দুর্ঘটনা রপ্তানিখাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা দ্রুত সমাধান না করলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
এছাড়াও তারা বলেন, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও অর্থনৈতিক প্রভাব দেখা দিতে পারে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইএবি দাবি করছে দ্রুত ক্ষতিপূরণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে।
আগামী দিনে সরকারের পদক্ষেপ ও কার্গো ভিলেজের আধুনিকায়ন কার্যকর হলে রপ্তানিখাতের ক্ষতি সীমিত করা সম্ভব হবে।
এম আর এম – ১৮৭০,Signalbd.com