
বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহর মৃত্যুর মামলা নিয়ে আদালত নতুন নির্দেশ দিয়েছেন। অপমৃত্যুর মামলা হত্যা মামলা হিসেবে রূপান্তরের নির্দেশ ২৯ বছর পর এসেছে। ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক সোমবার (২০ অক্টোবর) এই আদেশ দেন।
আদালতের আদেশ ও মামলার বর্তমান অবস্থা
সালমান শাহর মৃত্যুর মামলায় তার মায়ের রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে আদালত মামলা হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রমনা মডেল থানার পুলিশকে। বাদীপক্ষের আইনজীবী আবিদ হাসান নিশ্চিত করেছেন, আদালত বাবার অভিযোগ এবং রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলের মৃত্যুকে হত্যা বলে দাবি করে মামলা করেন। তবে দীর্ঘদিন ধরেই মামলাটি নানা কারণে স্থগিত ছিল। আদালতের সাম্প্রতিক নির্দেশে মামলা আবার নতুন করে খোলা হলো।
সালমান শাহর জীবন ও মৃত্যুর প্রেক্ষাপট
সালমান শাহ ঢাকার ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৫ বছর বয়সে মারা যান। তার হঠাৎ মৃত্যুকে নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। তার সাবেক স্ত্রী সামিরা হক মৃত্যুকে আত্মহত্যা দাবি করেন। তবে নায়কের পরিবার বারবার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
সালমান শাহের পুরো নাম ছিল চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন। তার বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। ক্যারিয়ারের শুরুতে ছোটপর্দায় অভিনয় করেন ‘আকাশ ছোঁয়া’, ‘দোয়েল’, ‘সব পাখি ঘরে ফেরে’, ‘নয়ন’ এবং ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ নাটকে। এছাড়া তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন। চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে তিনি সর্বাধিক ১৩টি সিনেমায় অভিনয় করেন।
মামলার ইতিহাস ও রিভিশন আবেদন
সালমান শাহর মৃত্যুর পর প্রথমে তার বাবা অপমৃত্যু মামলা করেন। পরে হত্যার অভিযোগে মামলা রূপান্তরের আবেদন করেন। একাধিক তদন্তে হত্যার অভিযোগকে নাকচ করা হয় এবং আত্মহত্যার রায় দেয়া হয়।
২০০৩ সালে রিভিশন মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিবেদন দাখিল করেন যেখানে মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ বলা হয়। পরে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী মামলার রিভিশন আবেদন করেন। ২০২২ সালের ১২ জুন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা দায়ের করা হয়।
২০২৫ সালের ২০ অক্টোবর আদালত মামলাটিকে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই আদেশ দেশের বিনোদন জগত এবং সালমান শাহর ভক্তদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘ ২৯ বছর পর নায়কের মৃত্যুর সত্য উদঘাটনের দিক খোলার প্রক্রিয়া শুরু হলো। তদন্তের মাধ্যমে কিভাবে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তা প্রতিষ্ঠিত হলে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর পথে নতুন দিক উন্মোচিত হবে।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আদেশে হত্যার প্রকৃত সত্য উদঘাটনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি, প্রমাণ ও জবানবন্দি সংরক্ষণ এবং তদন্তে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হবে।
২৯ বছর পর সালমান শাহর মৃত্যুর মামলা হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করা নতুন আশা জাগিয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে স্থগিত এই মামলা আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। সালমান শাহর ভক্তরা এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছেন। তবে সত্য উদঘাটনের জন্য বিচারিক তদন্তের সুষ্ঠু কার্যক্রম চালানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এম আর এম – ১৮৬৬,Signalbd.com