
রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস এবং রোসাটম যৌথভাবে উদ্ভাবন করেছে নতুন প্রজন্মের প্লাজমা ইঞ্জিন, যা ব্যবহার করে মাত্র ৩০ দিনে মঙ্গল গ্রহে পৌঁছানো সম্ভব। এই প্রকল্প বৈজ্ঞানিক মহলে ইতিমধ্যেই উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, কারণ এটি মহাকাশ ভ্রমণের সময়সীমাকে অনেকাংশে কমাতে সক্ষম।
প্লাজমা ইঞ্জিনের প্রযুক্তিগত বিশদ
নতুন এই ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয়েছে ম্যাগনেটোপ্লাজমা প্রোপালশন সিস্টেম, যা হাইড্রোজেন আয়নের মাধ্যমে তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্র সৃষ্টি করে প্রচণ্ড থ্রাস্ট উৎপন্ন করে। রোসাটমের তথ্য অনুযায়ী, এই ইঞ্জিনের সাহায্যে রকেটের গতি সেকেন্ডে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা প্রচলিত রকেটের সর্বোচ্চ গতির প্রায় দ্বিগুণ।
বর্তমানে ইঞ্জিনটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। ১৪ মিটার লম্বা এবং ৪ মিটার চওড়া বিশেষ ভ্যাকুয়াম চেম্বারে কৃত্রিম মহাকাশ পরিবেশে পালস মোডে ৩০০ কিলোওয়াট শক্তিতে ২,৪০০ ঘণ্টা ধরে পরীক্ষিত হয়েছে। এই পরীক্ষায় ইঞ্জিন স্থিতিশীলভাবে কাজ করেছে, যা আগামী মঙ্গল অভিযানের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করছে।
মহাকাশ গবেষণার অগ্রগতি
বিংশ শতকের শুরুতে আধুনিক মহাকাশ গবেষণা যাত্রা শুরু হলেও, ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর ছিল আনুষ্ঠানিক সূচনা। এরপর একের পর এক বৈপ্লবিক উন্নয়নের মাধ্যমে মানবজাতি চাঁদ, মঙ্গল ও অন্যান্য গ্রহে রকেট প্রেরণের সক্ষমতা অর্জন করেছে।
রাশিয়ার প্লাজমা ইঞ্জিনের উদ্ভাবন এই ধারাবাহিকতার একটি নতুন অধ্যায়। এর মাধ্যমে রকেট মহাকাশে উচ্চ গতিতে চলতে পারবে, যা দীর্ঘমেয়াদি মঙ্গল মিশনকে মাত্র এক মাসে সফল করার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।
প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ
যদিও উদ্ভাবনটি যুগান্তকারী, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। মহাকাশে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ, ইঞ্জিনকে রকেটের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রযুক্তি, এবং নভোচারীদের শক্তি সরবরাহ নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিশেষত পারমাণবিক চুল্লি সংযুক্তি হতে পারে প্রয়োজনীয়, যা এখনও পরীক্ষাধীন।
এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে ইঞ্জিনের স্থায়িত্ব এবং মহাকাশে কার্যক্ষমতা যাচাই করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। রসকসমস এই সব দিক বিবেচনা করে আরও উন্নয়ন ও পরীক্ষা চালাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা
মহাকাশ গবেষণায় শুধু রাশিয়া নয়, যুক্তরাষ্ট্রও পিছিয়ে নেই। আমেরিকার স্টার্টআপ সংস্থা স্পিন লঞ্চ বিশেষ ক্যাটাপল্ট প্রযুক্তি তৈরি করছে, যা হাইপারসনিক গতিতে কৃত্রিম গ্রহ বা উপগ্রহকে মহাশূন্যে পাঠাতে পারবে। এটি পরিবেশবান্ধব এবং জ্বালানিবিহীন বিদ্যুৎ-চালিত। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের মধ্যেই নাসা এই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করবে।
বিশ্বজুড়ে মহাকাশ গবেষণায় এখন উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিযোগিতা চলছে। কে দ্রুততম এবং কার্যকর প্রযুক্তি উদ্ভাবনে এগিয়ে থাকবে, তা সময়ই প্রমাণ করবে।
সম্ভাব্য প্রভাব
প্লাজমা ইঞ্জিনের সফলতা মঙ্গল এবং অন্যান্য গ্রহে মানুষ পাঠানোর সময়সীমাকে কমিয়ে আনবে। এটি মহাকাশ ভ্রমণকে আরও সহজ এবং কল্পনাতীতভাবে দ্রুত করবে। পাশাপাশি, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, রকেট প্রযুক্তি এবং শক্তি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দশকে এই ধরনের উদ্ভাবন মহাকাশ ভ্রমণকে প্রায় জনসাধারণের জন্য সহজলভ্য করতে পারে।
রাশিয়ার নতুন প্লাজমা ইঞ্জিন মঙ্গল অভিযানে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে। প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, এটি মহাকাশ ভ্রমণকে দ্রুততর এবং আরও কার্যকর করে তুলবে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এবং গবেষণার ফলে আগামী দিনে আমরা মানবজাতির মহাকাশ অভিযানকে এক নতুন উচ্চতায় দেখতে পারব।
এম আর এম – ১৮৬৫,Signalbd.com