বাংলাদেশ

ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর জনগণকে ‘যুদ্ধের প্রস্তুতি’ নেয়ার আহ্বান

Advertisement

ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর নাগরিকদের রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘর্ষের জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন সুইডিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী পল জনসন। তিনি রোববার এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, শান্তি রক্ষা এবং প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য মানসিক ও সামরিক উভয়ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

ন্যাটোর বর্তমান অবস্থান ও ঘোষণা

সুইডিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জনসন জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর একটি পদক্ষেপ শুরু করেছে। তিনি বলেছেন, “শান্তি রক্ষা করতে হলে আমাদের যুদ্ধের সম্ভাবনার জন্য মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। শুধু অস্ত্র নয়, জনগণকেও প্রস্তুত থাকতে হবে।”

একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, ইউক্রেনের সহায়তার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলো আরও মার্কিন অস্ত্র সংগ্রহ করতে পারে। এ ধরনের ক্রয় প্রয়োজনীয় কারণ ইউরোপে সরঞ্জামের যথেষ্ট উৎপাদন নেই এবং তৎক্ষণাৎ সরবরাহের প্রয়োজন রয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত ও ন্যাটো সম্প্রসারণ

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতকে ন্যাটো একটি প্রক্সি যুদ্ধ হিসেবে দেখছে। মস্কো দাবি করে, ন্যাটো সম্প্রসারণের ফলে তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলো এ অবস্থাকে হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং প্রতিরক্ষা নীতিমালা শক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে।

গত কয়েক বছরে ন্যাটো সদস্য দেশগুলো তাদের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া, যৌথ অস্ত্র ক্রয় এবং উন্নত প্রযুক্তি বিনিয়োগের মাধ্যমে সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইউরোপীয় কমিশন ২০২৭ সালের মধ্যে যৌথ অস্ত্র ক্রয় কমপক্ষে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করার রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

সুইডিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আহ্বানের পর ইউরোপীয় নাগরিকদের মধ্যে সতর্কতা এবং প্রস্তুতির চেতনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাধারণ জনগণকে মানসিকভাবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা একটি নতুন রূপের সিভিল ডিফেন্স কৌশল।

অন্যদিকে, মস্কো এই আহ্বানকে রাজনৈতিক প্ররোচনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। রাশিয়ার কর্মকর্তারা বলেন, ইউরোপের এই প্রস্তুতি তাদের অভ্যন্তরীণ সংকটকে আড়াল করার প্রচেষ্টা মাত্র। তবে ন্যাটোর বক্তব্য অনুযায়ী, এটি মূলত প্রতিরক্ষা এবং সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলার প্রস্তুতি।

সামরিক প্রস্তুতি ও অস্ত্র কেনা

ইউরোপীয় দেশগুলো ইতিমধ্যেই অস্ত্র ক্রয় এবং সামরিক প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে নিজেদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। জনসন জানান, ইউক্রেনে সরবরাহের জন্য বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে দ্রুত অস্ত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়া, যৌথ প্রশিক্ষণ এবং সামরিক মহড়ার মাধ্যমে সৈন্যদের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিশ্চিত করা হচ্ছে।

এছাড়া, দেশগুলো নিজেদের সামরিক শিল্পকে আরও শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। নতুন অস্ত্র প্রযুক্তি, ড্রোন এবং রাডার ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে সম্ভাব্য আক্রমণের মোকাবিলা করা সহজ হবে।

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ন্যাটোর এই পদক্ষেপে ইউরোপে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে, এই প্রস্তুতি সাধারণ জনগণকে নিরাপত্তার অনুভূতি প্রদান এবং সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলায় সাহায্য করবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে এই ধরনের সতর্কতা ন্যাটোর নিরাপত্তা নীতি বাস্তবায়নের অংশ।

বিশেষজ্ঞরা আরও যোগ করেছেন, এই প্রস্তুতি শুধু সামরিক নয়, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং জনগণকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করার মাধ্যমে ন্যাটো ভবিষ্যতে যে কোনও হুমকি মোকাবেলার জন্য সক্ষম হবে।

ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি

বিশেষজ্ঞদের মতে, ন্যাটোর আহ্বান ইউরোপীয় দেশগুলোর জনগণকে সচেতন করে তুলবে এবং মানসিক ও সামরিকভাবে প্রস্তুত রাখতে সাহায্য করবে। তবে, এই প্রস্তুতি রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে। সামনের কয়েক মাসে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া এবং রাশিয়ার অবস্থান ভবিষ্যতের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এম আর এম – ১৮৫৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button