
বেতন, বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতাসহ তিন দফা দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা রবিবার ভুখামিছিল শেষে সোমবার থেকে আমরণ অনশনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। আন্দোলন চলতে পারে কয়েকদিন ধরে, সরকারের কোনো প্রাথমিক পদক্ষেপ থাকলেও শিক্ষকেরা তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আগে অনশন স্থগিত করবেন না।
শিক্ষকরা ভুখামিছিলের মাধ্যমে দাবি জানালেন
রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শিক্ষকরা মিছিল শুরু করেন। বেতনের ওপর ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১৫০০ টাকা চিকিৎসাভাতা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা দেওয়ার দাবিতে তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা দিয়ে মিছিল সম্পন্ন করেন। শহীদ মিনার এলাকায় শিক্ষকেরা বিকেল ৫টা পর্যন্ত অবস্থান করেন।
শিক্ষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব দেলাওয়ার হোসাইন আজিজী। তিনি বলেন, “আমরা সোমবার থেকে আমাদের দাবির বাস্তবায়নের জন্য আমরণ অনশনের কর্মসূচি শুরু করব। ক্লাস, পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে।”
গত এক সপ্তাহ ধরে এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের দাবির প্রতি সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করছেন। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল কালো পতাকা মিছিল, অনশন এবং শাহবাগ অবরোধ। রবিবারের ভুখামিছিল এই ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ।
সরকার পূর্বেই ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকার হারে প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে শিক্ষকরা তাদের প্রাথমিক দাবির ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া মানতে অনড় রয়েছেন।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
শিক্ষকদের আন্দোলন দেশের শিক্ষা খাতের কর্মপরিকল্পনায় সরাসরি প্রভাব ফেলছে। অনেক বিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস, পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, সরকার যদি তাদের পূর্ণ দাবিতে পদক্ষেপ না নেয়, তবে অনশন দীর্ঘদিন স্থায়ী হতে পারে।
এক বিশ্লেষক জানান, “শিক্ষকদের এই কর্মসূচি শুধু বেতনের নয়, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। সরকার যদি পদক্ষেপ না নেয়, তবে আন্দোলন আরও তীব্র আকার নিতে পারে।”
অংশগ্রহণকারীদের অভিজ্ঞতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, তিন নেতার মাজার এবং আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকরা ছড়িয়ে অবস্থান নেন। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক ও শিক্ষিকারা জানান, তারা অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে সবার মনোবল শক্তিশালী, তারা দাবির বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করবেন না।
দেলাওয়ার হোসাইন আজিজী বলেন, “আজকের ভুখামিছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আগামীকাল থেকে আমরা আমরণ অনশনে বসব। শিক্ষকেরা একসাথে থাকলে আমাদের দাবি আদায় সম্ভব।”
পরিসংখ্যান ও তুলনা
- বেতনের ওপর ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১৫০০ টাকা চিকিৎসাভাতা এবং ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা নিয়ে শিক্ষকদের তিন দফা দাবি।
- সরকার ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকার হারে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
- আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের মধ্যে রবিবার আরও কয়েকজন অসুস্থ হয়েছেন।
বিশ্লেষণ
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষক আন্দোলন শুধুমাত্র বেতনের দাবিতে সীমাবদ্ধ নয়। এটি শিক্ষা খাতের কর্মীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি শক্তিশালী সংকেত। সরকার যদি শিক্ষকদের মৌলিক দাবি পূর্ণরূপে মেনে নেয়, তবে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি এবং কর্মপরিকল্পনা পুনঃস্থাপন সম্ভব। অন্যথায় আন্দোলন দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।
শিক্ষকরা ভুখামিছিল ও সোমবার থেকে শুরু হওয়া আমরণ অনশনের মাধ্যমে তাদের দাবির প্রতি দৃঢ় অবস্থান রেখেছেন। সরকার যে কোনো প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েছে তা শিক্ষকদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। শিক্ষা খাতের স্থিতিশীলতা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে, সরকার কত দ্রুত এবং কার্যকরভাবে তাদের দাবির প্রতিফলন ঘটায়। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে, তা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এম আর এম – ১৮৪৪,Signalbd.com