ক্ষমতায় গেলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবি মানার আশ্বাস মির্জা ফখরুলের

আন্দোলনরত বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রবিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে শিক্ষক নেতারা তাদের দাবিদাওয়া উপস্থাপন করেন। বৈঠকে মির্জা ফখরুল আশ্বাস দেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয়করণের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে।
বৈঠকের বিস্তারিত আলোচনা
প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষকদের সংগঠন ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’-এর প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে সংগঠনের সদস্যসচিব দেলোয়ার হোসেন আজীজী সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপি মহাসচিব আমাদের দাবিগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, তাদের দল ক্ষমতায় গেলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণ করে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করা হবে।”
তিনি আরও জানান, বৈঠকে শিক্ষক প্রতিনিধিরা শিক্ষকদের বর্তমান আর্থিক সংকটের বিষয়েও বিস্তারিত তুলে ধরেন। শিক্ষকদের প্রস্তাব অনুযায়ী আপাতত বাড়িভাড়া ভাতা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবিসমূহ
বৈঠকে শিক্ষকরা তিন দফা দাবি পুনরায় উপস্থাপন করেন—
- বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ২০ শতাংশে উন্নীত করা।
- চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকায় উন্নীত করা।
- উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশে নির্ধারণ করা।
এছাড়া শিক্ষকরা পরবর্তীতে সব বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেন। তাদের মতে, জাতীয়করণ হলে শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং শিক্ষা ব্যবস্থার মানও বাড়বে।
অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপ ও পরবর্তী পদক্ষেপ
দেলোয়ার হোসেন জানান, বৈঠক চলাকালে বিএনপি মহাসচিব অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন এবং শিক্ষকদের প্রস্তাব ও আর্থিক বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “মির্জা ফখরুল শুধু আশ্বাসই দেননি, বাস্তবায়নের দিকেও গুরুত্ব দিয়েছেন। এটি আমাদের আন্দোলনে নতুন প্রেরণা দিয়েছে।”
শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
তিন দফা দাবিতে গত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা কালো পতাকা মিছিল করেন, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এবং শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন।
এদিকে আন্দোলনের মুখে আজ (রবিবার) অর্থ মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ঘোষণা করেছে, বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ বা ন্যূনতম ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হবে। এটি নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
বিএনপির অবস্থান ও প্রতিশ্রুতি
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বর্তমান সরকারের সময় শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষা খাতকে শক্তিশালী করতে হলে বেসরকারি শিক্ষকদের মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবিকে নীতিগতভাবে সমর্থন করবে এবং তা বাস্তবায়নে বিশেষ বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হবে।
শিক্ষকদের সঙ্গে সংলাপে বিএনপির কৌশল
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিএনপির এই সংলাপটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা খাতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা দেশের বৃহৎ পেশাজীবী শ্রেণির একটি অংশ, যাদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল অবস্থান রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে বিএনপি শুধু সহমর্মিতাই নয়, বরং একটি সম্ভাব্য নীতিগত অবস্থান তুলে ধরছে, যা দলটির নির্বাচনী ইশতেহারের অংশ হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
শিক্ষক আন্দোলনের প্রভাব
শিক্ষক আন্দোলনের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা কার্যক্রম আংশিকভাবে ব্যাহত হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকও আন্দোলনের পক্ষে সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তারা শিক্ষার্থীদের ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখে শান্তিপূর্ণ ও আইনসম্মত উপায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে এই বৈঠক শিক্ষক আন্দোলনে নতুন গতি এনেছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তারা আশাবাদী, এই সংলাপের মাধ্যমে তাদের দীর্ঘদিনের দাবি রাজনৈতিক মহলে নতুন গুরুত্ব পাবে।
তবে শিক্ষক সমাজ এখন অপেক্ষা করছে বাস্তব পরিবর্তনের—আশ্বাসের বাইরে গিয়ে কবে নাগাদ তাদের দাবিগুলো বাস্তব রূপ পাবে, সেটিই এখন সবার নজরে।
এম আর এম – ১৮৪১,Signalbd.com