বাংলাদেশ

ডেঙ্গু কেড়ে নিলো আরও এক প্রাণ, শনাক্ত ৬১৯

Advertisement

দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমেনি। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে এই মশাবাহিত রোগে। একই সময়ে নতুন করে ৬১৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌসুমি পরিবর্তনের এই সময়টিতে ডেঙ্গুর ঝুঁকি এখনো উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।

ঘটনাটির বিস্তারিত

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে শনিবার (১৮ অক্টোবর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আরও একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে।

এই ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন করে ৬১৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সর্বাধিক রোগী রাজধানী ঢাকাতেই।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১১৭ জন এবং দক্ষিণ সিটিতে ৭৬ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া বরিশাল বিভাগে ১২৬ জন, চট্টগ্রামে ১০৪ জন, ঢাকা বিভাগের অন্য জেলাগুলোতে ৪৪ জন, খুলনায় ৪৩ জন, রাজশাহীতে ৭৫ জন, ময়মনসিংহে ৩৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

আক্রান্ত ও মৃত্যুর সামগ্রিক পরিসংখ্যান

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ১,১২৯ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫৮,৮৯৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৫,৯৬৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

এদিকে, চলতি বছরে দেশে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৪৪ জনের। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি গত কয়েক বছরের মধ্যে অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী ডেঙ্গু মৌসুম। সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে কিছুটা কমলেও অক্টোবরের মাঝামাঝি আবার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলছে।

বর্ষা-পরবর্তী সময়েই ঝুঁকি বেশি

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষা শেষে যেই সময়টিতে আবহাওয়া গরম ও আর্দ্র থাকে, তখনই ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ে। বৃষ্টির পানি জমে থাকা জায়গাগুলোতে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি অব্যাহত থাকে। ফলে অনেকেই ধারণা করেন, বর্ষা শেষ মানেই ঝুঁকি কমে গেছে — কিন্তু বাস্তবে এই সময়টিই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নুরুল আমিন বলেন, “অক্টোবর মাসে অনেকেই ভাবেন ডেঙ্গুর মৌসুম শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু তখনই মশা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। বৃষ্টির পানিতে জন্ম নেওয়া লার্ভা কয়েকদিনেই পূর্ণবয়স্ক মশায় পরিণত হয়, যা সংক্রমণ বাড়ায়।”

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শ

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, এখনো জনসচেতনতা ও ঘরের ভেতরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কোনো বিকল্প নেই। সপ্তাহে অন্তত একবার বাড়ির ভেতর ও আশপাশের এমন স্থানগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে, যেখানে অল্প পানি জমে থাকে।

তাদের পরামর্শ অনুযায়ী—

  • ফুলের টব, ছাদের ড্রেন, পুরোনো টায়ার ও প্লাস্টিকের পাত্রে যেন পানি না জমে থাকে।
  • দিনের বেলায় বিশেষ করে সকালে ও বিকেলে মশার কামড় থেকে সাবধান থাকতে হবে।
  • জ্বর, মাথাব্যথা বা চোখের পেছনে ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, সময়মতো চিকিৎসা পেলে ডেঙ্গু থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব, তবে অবহেলা করলে জটিলতা ও মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।

নাগরিক উদ্বেগ ও বাস্তব চিত্র

রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে এখনো ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও প্রতিদিনই নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, “গত এক সপ্তাহ ধরে নতুন রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও পুরোপুরি স্থিতিশীল নয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে।”

অন্যদিকে, সাধারণ নাগরিকরা বলছেন, স্থানীয় প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। নিয়মিত মশা নিধন কার্যক্রম চালু রাখার পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত ডেঙ্গু ঝুঁকি পুরোপুরি কমবে না। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা কিছুটা কমলেও মশার প্রজনন এখনো অনুকূল পর্যায়ে রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা মনে করছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হতে পারে, তবে সে জন্য নাগরিকদের সহযোগিতা অপরিহার্য।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়, তবে শঙ্কামুক্তও নয়। প্রতিদিনই নতুন আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক, আর মৃত্যুও ঘটছে নিয়মিত। বর্ষা-পরবর্তী সময়ের এই পর্যায়ে সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার অভ্যাসই হতে পারে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র।

এম আর এম – ১৮২৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button