বাংলাদেশ

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন

Advertisement

রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে শনিবার দুপুরে হঠাৎ করে আগুন লাগে। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ায় মুহূর্তের মধ্যেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে এবং বিমানবন্দরের মূল টার্মিনাল নিরাপদ অবস্থায় আছে।

ঘটনার সূত্রপাত ও প্রাথমিক তথ্য

শনিবার (১৮ অক্টোবর ২০২৫) দুপুর আনুমানিক ২টা নাগাদ বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি বিভাগে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। সেখানে মূলত বিদেশ থেকে আসা পণ্য, বিশেষ করে ইলেকট্রনিকস, কাপড়, শিল্প কারখানার কাঁচামাল এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য মজুত রাখা হয়।

আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে কালো ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে যায় এবং চারপাশে তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।

ফায়ার সার্ভিসের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন,

“আগুনের খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। প্রথমে কার্গো ভিলেজের গুদাম এলাকার একাংশে আগুন দেখা যায়। সেখানে প্রচুর দাহ্য পদার্থ ছিল, যার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে আমাদের চারটি ইউনিট কাজ করছে। আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে আসার পথে।”

এছাড়া তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ নিশ্চিত না হলেও বিদ্যুৎ শর্ট সার্কিট বা গুদামে থাকা রাসায়নিক পদার্থ থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ বলেন,

“কার্গো ভিলেজের পাশে আমদানি বিভাগের এক অংশে আগুন লাগে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দরের অগ্নিনির্বাপক দল, ফায়ার সার্ভিস ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা একযোগে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”

তিনি আরও জানান, বিমানবন্দরের ফ্লাইট ওঠানামা স্বাভাবিক রয়েছে এবং যাত্রীদের কোনো ধরনের আতঙ্ক বা বিলম্বের কারণ ঘটেনি।

ক্ষতির পরিমাণ ও তদন্তের প্রস্তুতি

এখনও পর্যন্ত আগুনে ঠিক কতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বেশ কিছু মূল্যবান পণ্য ও নথিপত্র পুড়ে যেতে পারে। কার্গো ভিলেজে প্রতিদিন প্রায় কয়েকশ’ কোটি টাকার আমদানি ও রপ্তানি পণ্য লেনদেন হয়, তাই ক্ষতির পরিমাণ বড় হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং পুরো ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা হবে।

চোখে দেখা প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা

একজন প্রত্যক্ষদর্শী কর্মচারী বলেন,

“আমরা হঠাৎ দেখি গুদামের ভেতর থেকে ধোঁয়া উঠছে। সবাই চিৎকার করে বাইরে ছুটে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুন লেলিহান শিখায় রূপ নেয়। আমাদের বেশ কয়েকজন সহকর্মী ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও ততক্ষণে আগুন অনেকটা ছড়িয়ে পড়ে।”

আরেকজন জানান, গুদামের ভেতরে ইলেকট্রনিক পণ্য ও কাগজপত্র থাকায় আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

বিমানবন্দরে সতর্কতা ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা জোরদার

ঘটনার পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিমান নিরাপত্তা জোরদার করেছে। কার্গো ভিলেজের আশেপাশের এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে, যাতে কেউ অপ্রয়োজনে সেখানে প্রবেশ করতে না পারে।

বিমানবন্দরের নিরাপত্তা প্রধান জানিয়েছেন,

“আমরা ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করেছি। যেহেতু বিমানবন্দর একটি উচ্চ নিরাপত্তার এলাকা, তাই যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি।”

বিমানবন্দর অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলনামূলক ভালো হলেও কার্গো ভিলেজের মতো গুদাম এলাকায় কিছু ঘাটতি রয়ে গেছে। অনেক সময় পণ্যের পরিমাণ বেশি হওয়ায় সঠিকভাবে ফায়ার এক্সিট বা অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম ব্যবহার করা যায় না।

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন,

“কার্গো ভিলেজে প্রতিদিন হাজার হাজার টন পণ্য ওঠানামা করে। সঠিক অগ্নি নিরাপত্তা মানা না হলে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ধরনের স্থানে নিয়মিত অডিট ও ফায়ার মহড়া অত্যন্ত জরুরি।”

আগেও ঘটেছিল অনুরূপ দুর্ঘটনা

এটি প্রথম নয়, শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অতীতে একাধিকবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে একই এলাকায় একটি ছোট গুদামে আগুন লাগে। তখনও দ্রুত পদক্ষেপে বড় ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছিল।

তবে এবার আগুনের পরিধি তুলনামূলক বড়, এবং পণ্য ক্ষতির আশঙ্কাও বেশি।

সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া ও নির্দেশনা

সিভিল এভিয়েশন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন,

“আমরা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে যা যা প্রয়োজন, সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে শিগগিরই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।”

তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, তার জন্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করার পরিকল্পনাও চলছে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিমানবন্দর বা কার্গো টার্মিনালে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত পরিদর্শন ও প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। প্রতিটি কর্মীকে ফায়ার ড্রিল বা আগুনের সময় করণীয় সম্পর্কে সচেতন করা প্রয়োজন।

এছাড়া পুরনো বৈদ্যুতিক তার, যন্ত্রপাতি ও স্টোরেজ সিস্টেম আধুনিকীকরণ করা জরুরি।

ঘটনার প্রভাব আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশের প্রধান বিমানবন্দর, যার মাধ্যমে দেশের আমদানি-রপ্তানির বিশাল অংশ সম্পন্ন হয়। প্রতিদিন হাজারো টন পণ্য কার্গো ভিলেজে ওঠানামা করে।

তাই এই ধরনের আগুন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কার্যক্রমে অস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী পণ্য যেমন তৈরি পোশাক, চামড়া, ওষুধ এবং ইলেকট্রনিক সামগ্রীর চালান কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শেষ খবর পর্যন্ত অবস্থা

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ফায়ার সার্ভিসের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে ধোঁয়া ও তাপের কারণে ঘটনাস্থলে প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে। তদন্ত দলকে আনুষ্ঠানিকভাবে আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সর্বোপরি বার্তা

এই অগ্নিকাণ্ড আবারও স্মরণ করিয়ে দিল যে, নিরাপত্তা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কখনোই আত্মতুষ্টির জায়গা নেই। প্রতিটি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিতভাবে তাদের অগ্নি প্রতিরোধ ও মোকাবিলা ব্যবস্থা হালনাগাদ রাখতে হবে, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।

MAH – 13365 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button