ট্রাম্পের নির্দেশে সোমালিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন বিমান হামলা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে সোমালিয়ায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর আফ্রিকা কমান্ড (আফ্রিকম) এই হামলা পরিচালনা করে। পেন্টাগনের তথ্য অনুযায়ী, হামলায় আইএসের একজন জ্যেষ্ঠ পরিকল্পনাকারীসহ বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হয়েছেন। তবে বেসামরিক লোকজনের কোনো ক্ষতি হয়নি।
হামলার উদ্দেশ্য
ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে বলেন, “এসব হত্যাকারীরা গুহায় লুকিয়ে থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আমাদের মিত্রদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “এই হামলা লুকিয়ে থাকার গুহাগুলো ধ্বংস করেছে এবং বেসামরিক মানুষদের ক্ষয়ক্ষতি না করেই অনেক সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে।”
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানান, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, সোমালিয়ায় বিমান হামলায় বেশ কয়েকজন চিহ্নিত ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। হামলাটি সোমালিয়ার উত্তরাঞ্চলের গোলিস পার্বত্য এলাকায় চালানো হয়েছে।
সোমালিয়ার প্রেসিডেন্টের প্রতিক্রিয়া
সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহাম্মদ এই অভিযানের প্রশংসা করে বলেন, “এটি যুক্তরাষ্ট্র ও সোমালিয়ার মধ্যে শক্তিশালী নিরাপত্তা অংশীদারিত্বকে আরও সুদৃঢ় করেছে।” তিনি আরও বলেন, “সোমালিয়া আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ নির্মূল এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে তার মিত্রদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
আইএসের উত্থান
মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষত ইরাক ও সিরিয়ায় গত দশকে আইএসের উত্থান ঘটে। তবে বর্তমানে আফ্রিকার কিছু অংশে এই নিষিদ্ধ সংগঠনের বিস্তার ঘটেছে। আইএসের সোমালিয়া শাখা ২০১৫ সালে গঠিত হয়। আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ত আল-শাবাব গোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে এসে কয়েকজন আইএসের সোমালিয়া শাখা গড়ে তোলেন। আল-শাবাব সোমালিয়ার সবচেয়ে বড় জিহাদি গোষ্ঠী।
মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্বেগ
মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, আইএসের সেলগুলো তাদের নেতৃত্বের কাছ থেকে উত্তর সোমালিয়ায় আরও বেশি নির্দেশনা পাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কীভাবে পশ্চিমাদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা যায়, উন্নত সামরিক কৌশল শেখা, ড্রোন থেকে লুকিয়ে থাকা এবং ছোট কোয়াডকপ্টার তৈরি করা।
আইএস-সোমালিয়া ২০১৫ সালে আল-শাবাব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গঠিত হয়। এটি পুন্তল্যান্ডের গলগালা পর্বতমালায় সবচেয়ে সক্রিয়, যেখানে তারা আস্তানা ও প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করেছে এবং আবদুলকাদির মুমিনের নেতৃত্বে রয়েছে।
আইএসের কার্যক্রম
যদিও আইএসের প্রভাব আল-শাবাবের তুলনায় তুলনামূলকভাবে সীমিত, আইএস-সোমালিয়া দক্ষিণ ও মধ্য সোমালিয়ায় হামলায় জড়িত। গোষ্ঠীটি চাঁদাবাজি, চোরাচালান এবং অবৈধ করের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম অর্থায়ন করে, বিশেষ করে কিছু উপকূলীয় এলাকায় যেখানে তারা স্থানীয় ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর লড়াই
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, সোমালিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী এবং মার্কিন সামরিক বাহিনী দেশটির জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সর্বশেষ এই বিমান হামলা সেই প্রচেষ্টারই অংশ। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ আইএস এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র তার নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা
এই হামলা সোমালিয়ায় আইএসের ক্রমবর্ধমান হুমকির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। সোমালিয়ায় আইএসের উপস্থিতি এবং তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন, যাতে এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্ট