শিক্ষা

আলিমে এবারও দেশসেরা টঙ্গীর তা’মীরুল মিল্লাত

Advertisement

২০২৫ সালের আলিম পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর আবারও দেশজুড়ে আলোচনায় এসেছে টঙ্গীর তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা। দেশের মাদরাসা শিক্ষায় উৎকর্ষ ও ধারাবাহিক সাফল্যের ঐতিহ্য ধরে রেখে এবারও প্রতিষ্ঠানটি অর্জন করেছে দেশসেরা মাদরাসার মর্যাদা।

বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, এই বছরও তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা দেশের শীর্ষস্থানে রয়েছে। বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির মোট ১,২৭৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১,২৬০ জন শিক্ষার্থী, যা ৯৯.০৬ শতাংশ সফলতার হার নির্দেশ করে।

এর মধ্যে ৬৬১ জন শিক্ষার্থী অর্জন করেছে সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫, যা দেশের অন্যান্য মাদরাসার তুলনায় একটি অনন্য রেকর্ড।

বিভাগভিত্তিক ফলাফল:

বিজ্ঞান বিভাগে উজ্জ্বল সাফল্য

বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা এ বছরও চমক দেখিয়েছে। মোট ৫২০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়, যার মধ্যে ৫১৭ জন উত্তীর্ণ হয়। এদের মধ্যে ৩৯০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেছে, যা দেশের মাদরাসা পর্যায়ে বিরল একটি কীর্তি।

সাধারণ বিভাগেও দারুণ সাফল্য

সাধারণ বিভাগেও সাফল্যের ধারা বজায় রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। মোট ৭৫৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়, যার মধ্যে ৭৪৩ জন উত্তীর্ণ হয় এবং ২৭১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়।

অধ্যক্ষের অভিমত

তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. মো. হেফজুর রহমান বলেন,

“এটি আমাদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রম, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিষ্ঠা এবং নিয়মিত একাডেমিক তত্ত্বাবধানের ফল। আমরা শুধু ভালো ফল নয়, নৈতিক, আদর্শবান ও জ্ঞাননির্ভর প্রজন্ম গড়ে তুলতে কাজ করছি।”

তিনি আরও বলেন,

“আমাদের পাঠ্যক্রম আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস মূল্যায়ন, পরামর্শমূলক সেশন, মডেল টেস্ট ও কনসেপ্টভিত্তিক পাঠদানের মাধ্যমেই আমরা এই সাফল্য অর্জন করেছি।”

তা’মীরুল মিল্লাতের সাফল্যের ধারাবাহিকতা

এই মাদরাসা শুধু এ বছর নয়, গত এক দশক ধরেই মাদরাসা শিক্ষায় শীর্ষে অবস্থান করছে।
২০১৫ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি বছরই প্রতিষ্ঠানটি দেশসেরা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

এর আগে ২০২৪ সালের আলিম পরীক্ষায়ও প্রতিষ্ঠানটির ৯৮.৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয় এবং ৬১৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেছিল।
এভাবে ধারাবাহিক সাফল্য প্রমাণ করে যে, তা’মীরুল মিল্লাত শুধুমাত্র একটি মাদরাসা নয়—এটি একটি শিক্ষার মডেল প্রতিষ্ঠান, যেখানে ধর্মীয় জ্ঞান ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।

আধুনিক শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সমন্বয়

তা’মীরুল মিল্লাতের শিক্ষাদর্শন মূলত “ইলম ও আমল”—জ্ঞান ও কর্মের মিলনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে আলিম ও দারস-ইন-নিজামির পাশাপাশি পড়ানো হয় আধুনিক বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, গণিত, ইংরেজি, অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও চারিত্রিক গুণাবলি বিকাশে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। নিয়মিত আলোচনা সভা, নৈতিক শিক্ষা ক্লাস, এবং দ্বীনী চেতনা বিকাশমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়।

এ কারণেই তা’মীরুল মিল্লাতের শিক্ষার্থীরা শুধু ভালো ফল নয়, বরং দেশের বিভিন্ন খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে—বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি চাকরি, গবেষণা, এমনকি আন্তর্জাতিক ইসলামী প্রতিযোগিতাতেও তারা সফলতা অর্জন করছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীর নিবেদন ও পরিশ্রম

প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যের মূল রহস্য হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতা ও কঠোর পরিশ্রম
শিক্ষকরা প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন। নিয়মিত মডেল টেস্ট, গ্রুপ ডিসকাশন ও লিখিত অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দুর্বল দিক চিহ্নিত করে সংশোধন করা হয়।

এছাড়া অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশকে আরও শক্তিশালী করা হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা

ফল প্রকাশের পর আনন্দে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম ও নিয়মিত অনুশীলন।
বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন,

“আমাদের শিক্ষকরা সবসময় পাশে থেকেছেন। প্রতিদিনের ক্লাসের পাশাপাশি বিশেষ প্রস্তুতি ক্লাসগুলোই আমাদের ফলাফলকে এত ভালো করেছে।”

অন্যদিকে সাধারণ বিভাগের ছাত্রী সাবিহা আক্তার বলেন,

“আমরা শুধু বইয়ের জ্ঞান নয়, বাস্তব জীবনে প্রয়োগযোগ্য শিক্ষাও পাই এখানে। তাই প্রতিযোগিতামূলক যেকোনো পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাস নিয়ে অংশ নিতে পারি।”

মাদরাসা শিক্ষার মান উন্নয়নে তা’মীরুল মিল্লাতের অবদান

বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় তা’মীরুল মিল্লাত এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এই প্রতিষ্ঠান প্রমাণ করেছে—ধর্মীয় শিক্ষা ও আধুনিক বিজ্ঞানের সমন্বয়েই সম্ভব একটি মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা

বর্তমানে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রায় ৯ হাজার মাদরাসা রয়েছে। এর মধ্যে তা’মীরুল মিল্লাত প্রতিনিয়ত শিক্ষণ পদ্ধতি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, ও পাঠ্যসূচিতে উদ্ভাবনী পরিবর্তন এনে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

অধ্যক্ষ ড. হেফজুর রহমান জানান, প্রতিষ্ঠানটি আগামী বছর থেকে ডিজিটাল লার্নিং মডিউল চালু করতে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস, ই-লাইব্রেরি ও স্মার্ট মূল্যায়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে পড়াশোনার সুযোগ পাবে।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক মানের উচ্চতর ইসলামী গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে, যেখানে ইসলাম, বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে সমন্বিত গবেষণা করা হবে।

অভিভাবক ও সমাজের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় অভিভাবক ও সমাজের নেতৃবৃন্দ বলেন, তা’মীরুল মিল্লাত শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি সমাজের নৈতিক ও মানবিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু।
তাদের মতে, এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জ্ঞানী, সৎ ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

২০২৫ সালের আলিম পরীক্ষায় টঙ্গীর তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার সাফল্য কেবল একটি ফলাফল নয়, এটি বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষার অগ্রযাত্রার প্রতীক।
দেশের শিক্ষাঙ্গনে এমন প্রতিষ্ঠান যত বাড়বে, তত দ্রুতই আমরা অর্জন করব একটি জ্ঞাননির্ভর, নৈতিক ও আলোকিত সমাজ।

MAH – 13351 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button