
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারাকে মস্কো সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এটি হবে শারার প্রথম রাশিয়া সফর। বুধবার ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, দুই দেশের নেতারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়েও তাদের মধ্যে মতবিনিময় হবে।
সিরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট শারার এই সফরের উদ্দেশ্য হলো রাশিয়ার সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক পুনর্গঠন এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো। সফর চলাকালে তিনি রাশিয়ায় বসবাসরত সিরীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের মতামত জানবেন।
এর আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সিরিয়া রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটিগুলোর উপস্থিতি বজায় রাখতে আগ্রহী, তবে নতুন পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এসব ঘাঁটির কার্যক্রম ও দায়িত্ব পুনর্নির্ধারণ করা হতে পারে। লাভরভের এ বক্তব্য রুশ সংবাদ সংস্থা তাসের প্রতিবেদনে উঠে আসে।
ফেব্রুয়ারি মাসে পুতিন ও শারার মধ্যে টেলিফোনে আলোচনা হয়েছিল। তখন পুতিন সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব, স্থিতিশীলতা এবং জাতীয় ঐক্যের প্রতি রাশিয়ার দৃঢ় সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া আগের আসাদ সরকারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনা করতে আগ্রহী এবং আন্তর্জাতিক সমাজকে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
এই সফর এমন সময়ে হচ্ছে, যখন রাশিয়া ও সিরিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুনভাবে গড়ে উঠছে। গত মাসে রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক দামেস্ক সফর করেন এবং সিরিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জ্বালানি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
সিরিয়ায় দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আহমদ আল-শারা বর্তমানে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি জানুয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার আগে প্রায় পঁচিশ বছর দেশটি শাসন করেন বাশার আল-আসাদ। ২০২৪ সালের শেষ দিকে আসাদ রাশিয়ায় চলে যান, যা ১৯৬৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা বাথ পার্টির দীর্ঘ শাসনের অবসান ঘটায়।
বিশ্লেষকদের মতে, শারার এই সফর শুধু রাজনৈতিক প্রতীক নয়, বরং এটি রাশিয়া-সিরিয়া সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। রাশিয়া চায় মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব ধরে রাখতে, আর সিরিয়া চায় যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনে রাশিয়ার সহায়তা পেতে। ফলে এই বৈঠক দুই দেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে নতুন মাত্রা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই সফরের ফলাফল মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, রাশিয়া যদি সিরিয়াকে পুনর্গঠন ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে আরও কার্যকর ভূমিকা দিতে শুরু করে, তাহলে আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যেও পরিবর্তন আসতে পারে। পুতিন ও শারার বৈঠক সেই পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
NA-100003,signalbd.com