বাংলাদেশ

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ পুলিশকে প্রত্যাহারের নির্দেশ

Advertisement

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ পুলিশের একমাত্র অবশিষ্ট কনটিনজেন্টকে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র থেকে দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অবদানের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ অংশগ্রহণ নিয়ে নতুনভাবে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, মোট ১৮০ সদস্যের এই কনটিনজেন্টের মধ্যে ৭০ জন নারী পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা আগামী নভেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরবেন। মাত্র দুই মাস আগে এই কনটিনজেন্টের অংশ হিসেবে জাতিসংঘের একমাত্র সর্ব-মহিলা পুলিশ ইউনিট মোতায়েন করা হয়েছিল।

জাতিসংঘের নথি অনুযায়ী, কঙ্গো, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র ও দক্ষিণ সুদানের বিভিন্ন মিশনে ধাপে ধাপে সদস্যসংখ্যা কমানো এবং প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের পুরো কনটিনজেন্টের প্রত্যাহার প্রথমবারের মতো নেওয়া হয়েছে।

প্রেক্ষাপট ও পূর্ব অভিজ্ঞতা

বাংলাদেশ পুলিশের অংশগ্রহণ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দীর্ঘদিনের। ২০০৫ সাল থেকে কঙ্গোতে বাংলাদেশ পুলিশের নারী এফপিইউ ইউনিট দায়িত্ব পালন করছে। চলতি বছরের আগস্টে এ ইউনিটের মেডেল প্যারেডে জাতিসংঘ মহাসচিবের কঙ্গো বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন, যা ইউনিটের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রকাশ।

বাংলাদেশ পুলিশের এফপিইউ ইউনিট কঙ্গোতে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র এক মাস পরই প্রত্যাহারের নির্দেশ পাওয়ায় হতাশা তৈরি হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের একজন অতিরিক্ত ডিআইজি জানান, জাতিসংঘের বাজেট সংকোচন ও সংস্থার জনবল হ্রাস নীতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের একমাত্র নারী এফপিইউ ইউনিটের প্রত্যাহার আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অবদানের ধারাবাহিকতাকে প্রভাবিত করতে পারে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রভাব কমিয়ে দিতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, “জাতিসংঘ সাধারণত সদস্যসংখ্যা কমালে তা সব দেশের ক্ষেত্রেই আংশিকভাবে প্রযোজ্য হয়। কিন্তু এবার পুরো বাংলাদেশি ইউনিটকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি পুলিশের জন্য যেমন হতাশার, তেমনি দেশের জন্যও।”

প্রত্যাহারের সময়সূচি

সূত্র জানায়, ২০ অক্টোবরের মধ্যে ১৬২ জন সদস্য দেশে ফিরবেন, আর বাকি ১৮ জন প্রশাসনিক ও লজিস্টিক কার্যক্রম শেষ করে নভেম্বরের মধ্যভাগে দেশে ফিরে আসবেন। বর্তমান দলটি আগস্টে কঙ্গো পৌঁছে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যক্রম শুরু করে। মাত্র এক মাসের মধ্যেই তাদের প্রত্যাহারের নির্দেশ আসায় পরিকল্পিত কার্যক্রমে সাময়িক ভাটা পড়েছে।

বাজেট সংকট ও কৌশলগত বিশ্লেষণ

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অর্থ সংকট ও জনবল হ্রাস নীতি মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে সংস্থাগুলো কার্যক্রমে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সংস্কার করছে। বাংলাদেশি ইউনিটের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার একদিকে বাজেট সংকটের কারণে হলেও অন্যদিকে কূটনৈতিক সংযোগের স্বার্থেও নতুন আলোচনা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য প্রভাব

বাংলাদেশ পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। এই প্রত্যাহার ভবিষ্যতে দেশের অংশগ্রহণকে সীমিত করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের উচিত জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই ধরনের সিদ্ধান্তে সমন্বয় করা।

পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “বাংলাদেশের ইউনিট সব সময় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে। প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্ত দেশের মর্যাদার জন্যও এক চ্যালেঞ্জ।”

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ পুলিশকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়তে পারে। দীর্ঘদিনের অবদান থাকা সত্ত্বেও কনটিনজেন্টের পূর্ণ প্রত্যাহার দেশের কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

ভবিষ্যতে সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে জাতিসংঘের সঙ্গে সমন্বয় বৃদ্ধি করা এবং বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখা।

এম আর এম – ১৮০২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button