
শ্রীলঙ্কা সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আজ ১৫ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশিসহ সব দেশের পর্যটকদের জন্য ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথোরাইজেশন (ইটিএ) বাধ্যতামূলক হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকরা বিমানবন্দরে পৌঁছেও অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা নিতে পারতেন। নতুন নিয়মে আগেই অনুমতি সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক।
শ্রীলঙ্কার হাইকমিশন ঢাকার মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। পর্যটকরা এখন দুইভাবে ইটিএ আবেদন করতে পারবেন। প্রথমটি হলো সরকারী ওয়েবসাইটের মাধ্যমে (eta.gov.lk/slvisa), এবং দ্বিতীয়টি হলো ঢাকার শ্রীলঙ্কা হাইকমিশন থেকে সরাসরি আবেদন জমা দিয়ে অনুমতি নেওয়া।
আবেদন প্রক্রিয়া ও ফি
প্রাথমিকভাবে ৩০ দিনের জন্য ডবল এন্ট্রি ইটিএ ভিসা ইস্যু করা হয়। এটির ফি ২০ মার্কিন ডলার বা প্রায় ২,৫০০ টাকা। ১২ বছরের নিচের শিশুদের জন্য কোনো ফি নেই। এই ব্যবস্থা আগাম অনুমতি সংগ্রহকে সহজ করে এবং বিমানবন্দরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা কমায়।
শ্রীলঙ্কার দর্শনীয় স্থান যেমন সিগিরিয়া রক, পিন্নাওয়ালা এলিফ্যান্ট অরফানেজ এবং সুন্দর সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের আকর্ষণ করে। প্রতি বছর হাজার হাজার বাংলাদেশি পর্যটক এই দ্বীপরাষ্ট্রে ভ্রমণ করেন।
বাংলাদেশি পর্যটকদের আগ্রহ
শ্রীলঙ্কা পর্যটন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি দেশটি ভ্রমণ করেছিলেন। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এই সংখ্যা ৪৫ হাজারের বেশি। ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কলম্বো সময় লাগে তিন–চার ঘণ্টা। শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, থাই এয়ারওয়েজ, ফিট এয়ার, ইন্ডিগো এবং এয়ার ইন্ডিয়া নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে।
রুকাইয়া জাহান, বাংলাদেশি ট্যুর কনসালট্যান্ট, বলেন, “আগাম ইটিএ নিলে বিমানবন্দরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা এড়িয়ে পর্যটকরা দ্রুত যাত্রা শুরু করতে পারবেন। এটি ভ্রমণকে আরও সুরক্ষিত ও সুবিধাজনক করে তুলেছে।”
এর আগে বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকরা বিমানবন্দরে পৌঁছার পর অন-অ্যারাইভাল ভিসা নিতে পারতেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়ানোর সমস্যা, ফি প্রদানের জটিলতা এবং প্রশাসনিক ঝামেলা এই ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করেছে। সেজন্য শ্রীলঙ্কা সরকার ইটিএ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রভাব ও সুবিধা
আগাম ইটিএ সিস্টেমের ফলে পর্যটকরা আগে থেকে তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে পারবেন। বিমানবন্দর ও ইমিগ্রেশন সিস্টেমের চাপ কমবে। এছাড়া পর্যটকরা সময়মতো অনুমতি নিয়ে নিরাপদে দেশটি প্রবেশ করতে পারবেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগাম অনুমতির এই ব্যবস্থা শ্রীলঙ্কার পর্যটন শিল্পের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াবে এবং দেশের পর্যটন আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
সচেতনতা ও পরামর্শ
শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়া বাংলাদেশি পর্যটকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তারা ভ্রমণের আগে ইটিএ সংগ্রহ নিশ্চিত করুন। আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত টিকিট বুকিং বা ফ্লাইট পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। ১২ বছরের নিচের শিশুদের জন্য ফি প্রযোজ্য না হলেও তাদেরও ইটিএ সংগ্রহ করা আবশ্যক।
শ্রীলঙ্কা ভ্রমণের জন্য ইটিএ বাধ্যতামূলক হওয়ায় বাংলাদেশি পর্যটকদের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। নতুন নিয়ম ভ্রমণকে সহজ, নিরাপদ ও পরিকল্পিত করবে। তবে পর্যটকদের সচেতন থাকা এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা অপরিহার্য।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, শ্রীলঙ্কা সরকারের এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক এবং দেশের পর্যটন শিল্পে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এম আর এম – ১৮০০,Signalbd.com