
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বুধবার (১৫ অক্টোবর) ঘোষণা করেছে, গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তরিত চারটি মরদেহের মধ্যে একটি মরদেহ কোনো ইসরায়েলি জিম্মির নয়, বরং এটি একজন ফিলিস্তিনির।
হামাস মঙ্গলবার রাতে আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের মাধ্যমে চারটি মরদেহ ইসরায়েলকে হস্তান্তর করে। এর মধ্যে তিনটি মরদেহ ছিল ইসরায়েলি জিম্মিদের। শনাক্ত হওয়া মরদেহগুলো হল স্টাফ সার্জেন্ট তামির নিমরোদি (১৮), উরিয়েল বারুখ (৩৫), এবং আইতান লেভি (৫৩)। চতুর্থ মরদেহটি ফরেনসিক পরীক্ষায় নিশ্চিত হয় যে কোনো সাবেক জিম্মির সঙ্গে মেলেনি এবং এটি একজন ফিলিস্তিনির মরদেহ।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, এই হস্তান্তর যুদ্ধবিরতি চুক্তির এক দিনের মধ্যেই ঘটেছে, যখন ইসরায়েল হামাসকে নতুন যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগে সতর্ক করেছিল।
ফরেনসিক পরীক্ষার ফলাফল
ইসরায়েলের তেল আবিবের আবু কাবির ফরেনসিক ইনস্টিটিউটে মৃতদেহগুলো পরীক্ষা করা হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে যে চতুর্থ মরদেহটি কোনো জিম্মি নয়, এটি একজন ফিলিস্তিনির। ফরেনসিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, নিহত জিম্মিদের মধ্যে শুধুমাত্র তিনজনের পরিচয় নিশ্চিত করা গিয়েছে।
আইডিএফ জানিয়েছে, এই হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় মরদেহের পূর্ণ পরিচয় এবং জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রাখা হয়েছে। মরদেহ হস্তান্তরের পরপরই তা পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে কিছু ইসরায়েলি সৈনিককে ফিরিয়ে দেয়ার শর্তে সম্মত হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় গত সোমবার ২০ জন জীবিত জিম্মি মুক্তি পায়। এর পাশাপাশি ৮টি মরদেহও হস্তান্তরিত হয়।
হামাসের হস্তান্তরিত মরদেহের মধ্যে একজন নেপালি নাগরিক এবং ছয়জন ইসরায়েলি ছিলেন। তবে শনাক্ত করা ৮টির মধ্যে চতুর্থটি কোনো সাবেক জিম্মির সঙ্গে মেলেনি।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছে, নিহত জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেওয়া চুক্তির শর্তাবলী অনুযায়ী হামাসের দায়িত্ব। তিনি বলেন, “বারুখ, নিমরোদি ও লেভির পরিবারসহ সকল পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। হামাসকে বাকি মরদেহগুলো ফেরত দিতে হবে। এই বিষয়ে ইসরায়েল কোনো আপস করবে না।”
জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রীর বক্তব্য, হামাস যদি গাজায় এখনো আটক সেনাদের মরদেহ ফেরত না দেয়, তবে আন্তর্জাতিক সাহায্য সীমিত করা হতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া এবং চতুর্থ মরদেহ ফিলিস্তিনির হওয়া, সামরিক ও কূটনৈতিক অবস্থানের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এই ঘটনা হামাসের ওপর চাপ বাড়ানোর একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ
মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় হামাস সোমবার থেকে জীবিত জিম্মি মুক্তি দিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে হস্তান্তরিত মরদেহের সংখ্যা ও পরিচয় নির্ধারণ করা হয়।
বিশ্ব মিডিয়ায় খবরটি গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে, কারণ এটি গাজার নিয়ন্ত্রণ, যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও ভবিষ্যৎ শান্তি প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা দুই পক্ষের মধ্যে আস্থার ওপর প্রভাব ফেলে, যা ভবিষ্যতের আলোচনাকে কঠিন করতে পারে।
সামরিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষণ
আইডিএফ জানিয়েছে, মরদেহ হস্তান্তরের ঘটনা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগের এক দিনের মধ্যে ঘটেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ইসরায়েলের পক্ষ থেকে হামাসের উপর চাপ প্রয়োগের কৌশল। মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইন অনুযায়ী সম্পন্ন হয়েছে।
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মরদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা দ্ব্যর্থতা হয়নি। তবে ইসরায়েলের কাছে চতুর্থ মরদেহটি আসলে জিম্মি নয়, যা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নজর কাড়ছে।
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের হস্তান্তরিত মরদেহের মধ্যে চতুর্থটি জিম্মি নয়, যা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ফরেনসিক পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে। এই ঘটনা সামরিক ও কূটনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও ভবিষ্যৎ শান্তি প্রক্রিয়া এই ঘটনার ফলে প্রভাবিত হতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মরদেহের এই পরিচয় হস্তান্তর, দুই পক্ষের মধ্যে নির্ভরযোগ্যতা ও আস্থা বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।
এম আর এম – ১৭৯৩,Signalbd.com