বিশ্ব

যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে গাজ্জায় ইসরাইলের হামলায় নিহত ৯ ফিলিস্তিনি

Advertisement

যুদ্ধবিরতি ঘোষণা উপেক্ষা করে গাজ্জার বিভিন্ন স্থানে ফিলিস্তিনিদের ওপর নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, গাজ্জা সিটির পৃথক দুটি স্থানে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, নিহতরা মূলত গাজ্জা সিটিতে নিজেদের বাড়িতে ফিরছিলেন। হঠাৎ করেই ইসরাইলি সেনারা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। শহীদদের মৃতদেহ গাজ্জার আল-আহলি ও আল-নাসের হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ইসরাইলের দাবি এবং পরিস্থিতি

ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, নিহত ফিলিস্তিনিরা সেনাদের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। তাদের সন্দেহজনক আচরণকে কেন্দ্র করে সেনারা গুলি চালায়। যদিও এই দাবিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো অবিশ্বাসের চোখে দেখছে।

যুদ্ধবিরতির মাঝে হামলা, শান্তি প্রক্রিয়ায় ধাক্কা

ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়া সম্প্রতি কার্যকর হয়েছে, কিন্তু এই হামলা শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন ধাক্কা দিয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরাইলি বাহিনীকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছেন, “নাগরিকদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলা এবং শান্তি প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও এই হামলার প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেন, “নাগরিকদের ওপর যে কোনও আক্রমণকে আমরা নিন্দা জানাই। যুদ্ধবিরতির সময় এ ধরনের ঘটনা শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বিপজ্জনক।”

এর পাশাপাশি, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা যেমন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, আমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইসরাইলকে নাগরিকদের ওপর হামলা বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, “ফিলিস্তিনি জনগণ শান্তি এবং নিরাপত্তার অধিকার রাখে। কোনো বাহিনী তাদের উপর নৃশংসতা চালাতে পারবে না।”

গাজ্জার সাধারণ মানুষের দুঃখ

গাজ্জার সাধারণ মানুষ এই নতুন হামলার খবর পাওয়ার পর আতঙ্কে রয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তারা প্রতিনিয়ত আক্রমণের ভয়ে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে স্কুল, হাসপাতাল এবং বাজার এলাকার মানুষরা সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “আমরা বাড়ি ছাড়া কোথাও নিরাপদ বোধ করি না। যুদ্ধবিরতি থাকলেও সেনাদের হামলা আমাদের জীবনে শান্তি আনতে পারছে না।”

চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবা সংকট

গাজ্জার হাসপাতালগুলো ইতিমধ্যেই অতিভর্তি। নতুন এই হামলার ফলে আহতদের চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও চাপের মুখে পড়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, “আমরা আহতদের যতটা সম্ভব তাত্ক্ষণিক চিকিৎসা দিচ্ছি, তবে স্বাস্থ্যসেবা সীমিত।”

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক আইন

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির সময় এমন হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন। তারা উল্লেখ করেছেন, “নাগরিকদের ওপর নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ছাড়া আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। এটি শুধু ফিলিস্তিনি জনগণকে নয়, পুরো অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলে।”

সাম্প্রতিক পটভূমি

ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান সংঘাত বছরের পর বছর ধরে চলছে। সাম্প্রতিক কয়েক মাসে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার কারণে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যুদ্ধবিরতির জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছে।

ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাম্প্রতিক হামলায় শতাধিক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে এবং কয়েক হাজার মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছে। গাজ্জার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য সুবিধাগুলোও এই সংঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শান্তির আহ্বান

বিশ্ব সম্প্রদায়ের বিভিন্ন দেশ ফিলিস্তিন ও ইসরাইলকে শান্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে আহ্বান জানাচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, “দ্রুত ব্যবস্থা নিলে নগরীদের জীবন রক্ষা সম্ভব।”

গাজ্জায় এই হামলা শুধু নতুন শহীদ সৃষ্টি করেনি, বরং যুদ্ধবিরতি এবং শান্তির আশা ম্লান করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তৎপরতা ও নজরদারি না থাকলে, ফিলিস্তিনি জনগণের নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যাবে।

এ মুহূর্তে, গাজ্জার সাধারণ মানুষ শুধু জীবনের জন্য নিরাপত্তার আকাঙ্ক্ষা করছে, আর বিশ্বের কাছে শান্তি এবং ন্যায়ের আহ্বান জানাচ্ছে।

MAH – 13325 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button