বাংলাদেশ

জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

Advertisement

জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ১৩ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে জিজ্ঞাসাবাদের নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী সাবিনা ইয়াসমিনের অভিযোগ, তার স্বামী বুলবুল শিকদার ও সন্তানকে ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা ভুয়া জুলাই যোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করে নির্যাতন চালিয়েছেন। আদালত এই মামলাটি পুলিশ অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-কে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

ঘটনার বিস্তারিত

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাবিনা ইয়াসমিন তার স্বামী ও সন্তানের উপর নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রাম রোডের মাদানী নগর মাদ্রাসার সামনে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশের হামলায় তার স্বামী গুরুতর আহত হন এবং সন্তান পায়ে আঘাত পান।

২০২৫ সালের ২০ মার্চ তিনি তার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের অফিসে যান। অভিযোগ, অফিসে উপস্থিত কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন, সাগর, মেহেদী হাসান প্রিন্স ও অন্যান্যরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। একপর্যায়ে বাদীর স্বামীকে আলাদা কক্ষে নিয়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করা হয়। বাদীও মারধরের শিকার হন এবং তাদের ব্যাগ ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

আসামিরা

মামলার আসামিরা হলেন:

  • সিনিয়র ভেরিফিকেশন অফিসার ইফতেখার হোসেন
  • কর্মকর্তা সাগর
  • কর্মকর্তা মেহেদী হাসান প্রিন্স
  • এক্সিকিউটিভ মেম্বার সাবরিনা আফরোজ শ্রাবন্তী
  • কর্মকর্তা আফজালু রহমান সায়েম
  • কর্মকর্তা সাইদুর রহমান শাহিদ
  • কর্মকর্তা ফাতেমা আফরিন পায়েল
  • কর্মকর্তা রেজা তানভীর
  • রাকিন
  • শামীম রেজা খান
  • সোনিয়া আক্তার লুবনা
  • কর্মকর্তা আলিফ
  • কর্মকর্তা জাহিদ

জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ ও সংরক্ষণে কাজ করে আসছে। তবে অভিযোগ, ভুয়া জুলাই যোদ্ধা হিসেবে সরকারি তালিকায় নাম লেখানোর অভিযোগ যাচাইয়ের নামে কিছু ব্যক্তিকে ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছেন।

গত কয়েক বছরে দেশে ভুয়া জিজ্ঞাসাবাদ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘটনা কিছু ক্ষেত্রে প্রকাশ পেয়েছে। এই ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠেছে, প্রভাবশালী ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ ও দায়িত্ববোধের উপর।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

বাদী সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, নির্যাতনের ফলে তার স্বামী দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি বলেন, “আমাদের পরিবার মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই আমি এই মামলা করেছি।”

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তি হতে পারে। ফাউন্ডেশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি।

পরিসংখ্যান ও তথ্য

  • মামলার সংখ্যা: ১
  • মামলা দায়েরের তারিখ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫
  • তদন্তকারী সংস্থা: সিআইডি
  • অভিযোগের বিষয়: শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন
  • সংশ্লিষ্ট ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী: ১৩ জন
  • নির্যাতিত ব্যক্তিরা: বাদীর স্বামী বুলবুল শিকদার ও সন্তান

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “ভুয়া অভিযোগের নামে কেউ কাউকে নির্যাতন করলে এটি সুষ্ঠু বিচার ও মানবাধিকারের জন্য হুমকি।” আইনজীবী মও. জাকির হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, “সিআইডি তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা সামনে আসবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।”

সাইবার ও প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ফাউন্ডেশনের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও দায়িত্বশীলতার অভাব এই ধরনের ঘটনায় ভূমিকা রেখেছে।

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ও চ্যালেঞ্জ

আদালত সিআইডিকে আগামী ১১ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তে আসামিদের দায়িত্বশীলতা, স্বার্থপর আচরণ এবং নির্যাতনের প্রমাণ সামনে আসতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ফাউন্ডেশনকে ভবিষ্যতে স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা বাড়াতে হবে।

আইন এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছেন, শুধুমাত্র ব্যক্তিদের বিচার করা নয়, সমগ্র প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে তদারকি চালানো জরুরি।

জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি প্রমাণিত হলে দেশের বিভিন্ন ফাউন্ডেশন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীলতা এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন হবে। প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, এই মামলা কতটা সঠিকভাবে এবং দ্রুত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধান হবে।

এম আর এম – ১৭৮২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button