
র্যাব-৭ চট্টগ্রামে এবং র্যাব-৯ সিলেটে পৃথক অভিযান চালিয়ে দেশি ও বিদেশি মুদ্রাসহ প্রায় ২০ কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার করেছে। অভিযানে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও ও বাকলিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং সংঘবদ্ধ জালনোট চক্রের কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত মুদ্রার মধ্যে বাংলাদেশি ৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকার নোট, ইউএস ডলার, ইউরো, দেরহাম ও রিয়াল রয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত
মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও বাকলিয়া এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে র্যাব-৭ জাল মুদ্রা ও ছাপানোর সরঞ্জাম উদ্ধার করে। অভিযানে আটক করা হয় তানজিব নামে এক অনলাইন ব্যবসায়ীকে। র্যাবের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, চক্রটি অনলাইনের মাধ্যমে জাল নোট ছড়িয়ে বাজারজাত করত।
সিলেটে র্যাব-৯ পৃথক অভিযানে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় আটক করে মোক্তাদির আলী ওরফে রিপনকে। তার বসতঘর থেকে ৩০ লক্ষ টাকা মূল্যের দেশি এবং ৬০ লক্ষ টাকার বিদেশি জাল নোটসহ পাঁচটি নকল বিদেশি পিস্তল ও নকল গুলি জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি স্বীকার করেছেন, বিগত তিন মাস ধরে বিভিন্ন সরবরাহকারী থেকে জাল নোট ও নকল অস্ত্র সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন।
গত কয়েক মাসে দেশে জাল নোটের বৃদ্ধি লক্ষণীয়। র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি অনুযায়ী, চক্রটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনলাইন ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নকল মুদ্রা এবং অস্ত্র সরবরাহ করত। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চল জাল নোট ছাপানোর ও বিপণনের জন্য ব্যবহার হত।
পূর্ববর্তী অভিযানে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার হওয়ার সূত্র ধরে এই অভিযান পরিচালিত হয়। দেশের অর্থনীতিতে জাল নোট ছড়ানোর ফলে সাধারণ মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ণ হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকিং ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
র্যাবের এই অভিযানের ফলে জাল নোট চক্রের কার্যক্রমে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। আইনপ্রণেতারা ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটি দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এছাড়া সাধারণ মানুষও এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে, আসন্ন নির্বাচনের সময় সহিংসতা ও জাল নোটের বিস্তার রোধে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পরিসংখ্যান ও তথ্য
- উদ্ধারকৃত জাল নোট: প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের
- দেশের অন্তর্ভুক্ত বিদেশি মুদ্রা: ইউএস ডলার, ইউরো, দেরহাম, রিয়াল
- গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি: তানজিব (চট্টগ্রাম), মোক্তাদির আলী ওরফে রিপন (সিলেট)
- নকল অস্ত্র: ৫টি নকল বিদেশি পিস্তল, ৮ রাউন্ড গুলি
- অভিযান তারিখ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাল নোট ছড়িয়ে দেশে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “র্যাবের অভিযান দেশের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি অন্য চক্রের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে।”
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অনলাইনে জাল নোট ও নকল অস্ত্র বিক্রি রোধ করতে ক্রমাগত নজরদারি এবং প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ও চ্যালেঞ্জ
চলতি সময়ে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জাল নোট তৈরি ও সরবরাহকারীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, “যেহেতু চক্রটি অনলাইনের মাধ্যমে সক্রিয় ছিল, তাই শুধু গ্রেফতার করা যথেষ্ট নয়, প্রযুক্তিগতভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি।”
অতিরিক্তভাবে, জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে যাতে কেউ অনলাইনের মাধ্যমে জাল নোট বা নকল অস্ত্র কেনার ফাঁদে না পড়ে।
র্যাবের এই সফল অভিযান দেশের আর্থিক নিরাপত্তা ও সাধারণ মানুষের আস্থা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে জাল নোট প্রতিরোধ, অনলাইন চক্রের তৎপরতা নজরদারি এবং আইনের কার্যকর প্রয়োগ চালিয়ে যেতে হবে। প্রশ্ন থেকে যায়, আগামী দিনে জাল নোট চক্রের প্রতিরোধে আরও কতটা কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।
এম আর এম – ১৭৮১,Signalbd.com