বাংলাদেশ

শহীদ মিনার থেকে শিক্ষকদের লংমার্চ টু সচিবালয়

Advertisement

দেশব্যাপী বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের তিন দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ শুরু করেছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে হাজারো শিক্ষক এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। দীর্ঘদিন ধরে দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসা শিক্ষকরা এবার সরকারের কাছে চূড়ান্ত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।

দাবির মূল বিষয়: বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি

আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবি, তাদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা দিতে হবে, যা সর্বনিম্ন তিন হাজার টাকা হওয়া উচিত। পাশাপাশি শিক্ষক ও কর্মচারী উভয়ের জন্য চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা নির্ধারণ এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশে উন্নীত করার দাবি জানানো হয়েছে।

শিক্ষক সংগঠনগুলোর মতে, দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরেই এসব সুবিধা পাচ্ছেন, কিন্তু এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই তারা বলছেন, এটি কেবল অর্থনৈতিক নয়, ন্যায্য অধিকার আদায়ের লড়াই।

শহীদ মিনারে ভিড় জমায় হাজারো শিক্ষক

মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভিড় বাড়তে থাকে। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিক্ষক-কর্মচারীরা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান নেন। দুপুরের পর আন্দোলনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় এবং বিকেল চারটায় শুরু হয় সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শিক্ষকদের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। কেউ কেউ বলেছেন, তারা দিনের পর দিন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।

আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, দৃঢ় অবস্থানে শিক্ষকরা

সকালে শিক্ষা উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষক সংগঠনকে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে তারা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। শিক্ষক নেতারা বলেন, “আমাদের দাবি স্পষ্ট—প্রজ্ঞাপন দিতে হবে। এখন আর আলোচনার সময় নয়।”

এর আগে পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের কিছু প্রতিনিধির পক্ষ থেকেও কর্মসূচি স্থগিতের আহ্বান জানানো হয়। তবে শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, তারা বিকেল চারটা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। সেই সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে লংমার্চ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

পেছনের গল্প: দীর্ঘদিনের অবহেলা ও আন্দোলনের ধারাবাহিকতা

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবির বিষয়টি নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরে তারা পর্যায়ক্রমে মানববন্ধন, অবস্থান, ও কর্মবিরতি পালন করে আসছেন। এর আগে জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসেও একই দাবিতে বিক্ষোভ হয়, তবে সরকার থেকে আশ্বাস ছাড়া কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।

গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষকরা শহীদ মিনারে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। কেউ প্লাস্টিকের চট বিছিয়ে, কেউ ব্যানার মাথার নিচে দিয়ে রাত কাটিয়েছেন। তাদের দাবি, প্রজ্ঞাপন না আসা পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া ও শিক্ষকদের বক্তব্য

রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম দুপুরে শহীদ মিনারে এসে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, সরকার তাদের দাবির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে, তবে প্রজ্ঞাপন জারি হতে কিছুটা সময় লাগবে।

তবে আন্দোলনকারীদের একজন নেতা দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, “আমরা প্রজ্ঞাপন ছাড়া আন্দোলন থামাব না। সরকার আমাদের ন্যায্য দাবি মেনে নিক—এটাই চাওয়া।”

খুলনা থেকে আসা কলেজ শিক্ষক সুদাস চন্দ্র দাস বলেন, “আমরা শিক্ষার আলো ছড়াই, কিন্তু নিজের ঘরে অন্ধকার। সংসার চালানো কষ্টকর। পেটে খিদে রেখে পাঠদান করা অসম্ভব।”

সারাদেশে প্রতিধ্বনি: কর্মবিরতি চলছে

ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি সারাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বর্তমানে কর্মবিরতি পালন করছেন। তারা বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকলেও শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করছেন না। শিক্ষক লাউঞ্জ, মাঠ ও অফিসে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ের কর্মসূচি চালাচ্ছেন।

বিভিন্ন জেলার শিক্ষকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ঢাকায় অবস্থানরত সহকর্মীদের প্রতি সংহতি জানাচ্ছেন। ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে “আমাদের প্রজ্ঞাপন চাই” শিরোনামে অসংখ্য পোস্ট ভাইরাল হয়েছে।

শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভাব ও উদ্বেগ

দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই কর্মবিরতি দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার প্রস্তুতি ও পাঠদান কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি যেন দীর্ঘস্থায়ী না হয়।

শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার ও শিক্ষক নেতাদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান না হলে শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় শিক্ষক সমাজ

আন্দোলনকারী শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনার কোনো নতুন প্রস্তাব না এলে তারা আগামী সপ্তাহেও কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন। অনেকেই বলেছেন, এ লড়াই ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার, তাই তারা শেষ পর্যন্ত থাকবেন।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষকদের দাবি যুক্তিসঙ্গত হলে সরকারকে তা বিবেচনায় নেওয়া উচিত। কারণ শিক্ষক সমাজই দেশের শিক্ষা কাঠামোর ভিত্তি।

বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে যে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন, তা দেশের শিক্ষা খাতে নতুন বার্তা দিচ্ছে। তবে এই আন্দোলনের দীর্ঘায়িত হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্বেগের কারণ। সরকারের সঙ্গে দ্রুত সমঝোতায় পৌঁছানোই এখন একমাত্র প্রত্যাশা।

এম আর এম – ১৭৭২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button