বাংলাদেশে আবারও বাড়ানো হলো স্বর্ণের দাম; ২২ ক্যারেটের এক ভরির দাম ছাড়ালো ২ লাখ ১৩ হাজার ৭২০ টাকা।
ঘটনার বিস্তারিত
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম নতুন রেকর্ড স্পর্শ করেছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) সোমবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৭২০ টাকা। এটি দেশের ইতিহাসে স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম।
নতুন দাম মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে। বাজুস জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধির কারণে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিভিন্ন ক্যারেট অনুযায়ী দাম
নতুন সমন্বয় অনুযায়ী দেশের বাজারে স্বর্ণের অন্যান্য ক্যারেটের দামও নির্ধারণ করা হয়েছে।
- ২১ ক্যারেট: প্রতি ভরি ২ লাখ ৪ হাজার ৩ টাকা
- ১৮ ক্যারেট: প্রতি ভরি ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫৫ টাকা
- সনাতন পদ্ধতি: প্রতি ভরি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫২০ টাকা
এছাড়া রুপার দামও নতুন সমন্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
- ২২ ক্যারেট রুপা: প্রতি ভরি ৬ হাজার ২০৫ টাকা
- ২১ ক্যারেট রুপা: প্রতি ভরি ৫ হাজার ৯১৪ টাকা
- ১৮ ক্যারেট রুপা: প্রতি ভরি ৫ হাজার ৭৪ টাকা
- সনাতন পদ্ধতি: প্রতি ভরি ৩ হাজার ৮০২ টাকা
মূল্য বৃদ্ধির কারণ
বাজুস জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের স্বর্ণের দামের ওঠানামা, স্থানীয় চাহিদা এবং সরবরাহ পরিস্থিতি মিলিয়ে দাম সমন্বয় করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দর বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও প্রভাব পড়েছে। এছাড়া বিনিয়োগ ও সঞ্চয়কারীরা স্বর্ণে আগ্রহী হওয়ায় চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেড়েছে।
অতীতের মূল্য সমন্বয়
২০২৫ সালে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম মোট ৬৪ বার সমন্বয় করা হয়েছে। এর মধ্যে দাম বাড়ানো হয়েছে ৪৬ বার এবং কমানো হয়েছে ১৮ বার। আগের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ৮ অক্টোবর, তখন ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৯ হাজার ১০১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
২০২৪ সালে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম মোট ৬২ বার সমন্বয় করা হয়েছিল। সেই বছর ৩৫ বার দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল, আর ২৭ বার দাম কমানো হয়েছিল।
গহনার বাজার ও ভ্যাট প্রভাব
বাজুস জানিয়েছে, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।
বাজারের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী, উচ্চ দামের কারণে কিছু ক্রেতা আপাতত গহনা কেনা এড়িয়ে যাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বর্ণের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব সাময়িক হলেও বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি আগ্রহ অব্যাহত থাকবে।
বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব এবং স্থানীয় চাহিদা মিলে স্বর্ণের দাম আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচনা করছেন, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
অন্যদিকে, সাধারণ ক্রেতাদের জন্য উচ্চ দামের কারণে স্বর্ণের দৈনন্দিন ব্যবহারের প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাজার পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে স্বর্ণের নতুন রেকর্ড মূল্য দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। দাম বৃদ্ধির কারণে বাজারে প্রতিক্রিয়া ও বিনিয়োগ প্রবণতা উভয়ই পরিবর্তিত হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, আগামী সপ্তাহগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজার ও স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী দাম আরও ওঠানামা করতে পারে, যা ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করবে।
এম আর এম – ১৭৬৫,Signalbd.com



