রাজনীতি

জাতীয় নির্বাচনের দিনে গণভোট আয়োজন হলে ‘আম ও ছালা দুইটাই যাবে’: জামায়াত

Advertisement

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট না করার জন্য আলাদা আয়োজনের দাবি জানালেন।  

জামায়াতের দাবি ও গণভোট সংক্রান্ত মন্তব্য

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের দিনে যদি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে ‘আম ও ছালা দুইটাই যাবে’। তিনি স্পষ্ট করেন, জাতীয় নির্বাচন এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের গণভোট একই দিনে আয়োজন করা উচিত নয়।

ডা. তাহের সোমবার (১৩ অক্টোবর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে এই মন্তব্য করেন। বৈঠকে চারজন নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন। জামায়াতের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ডা. তাহের নিজে।

আলাদা গণভোটের প্রয়োজনীয়তা

জামায়াত নেতার যুক্তি অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচনের দিন সব দল ব্যস্ত থাকায় সাধারণ ভোটাররা প্রয়োজনে গণভোটে অংশ নেবে না। তিনি বলেন, “দেখা যাবে গ্রামের সাধারণ ভোটাররা ধানের শীষ বা দাঁড়িপাল্লার জন্য ভোট দিয়ে গণভোটের ব্যালট পকেটে নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছে। তাকে আবার ভোট দিতে কারা চাপাবে?”

ডা. তাহের আরও জানান, গণভোট একটি সহজ নির্বাচন। এটি আলাদা আকারে আয়োজন করলে নির্বাচন কমিশন পুলিশের সহযোগিতা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার সক্ষমতা ‘এক্সপেরিমেন্ট’ করতে পারবে। গণভোটের খরচও সামান্য, কারণ একই ভোট বাক্স ব্যবহার করা যাবে, শুধু অতিরিক্ত ব্যালট ও কালির খরচ হবে।

বৈঠকে আলোচিত অন্যান্য বিষয়

বৈঠকে জোর দিয়ে অনুরোধ করা হয়, জাতীয়ভাবে যদি সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে গণভোটটি আলাদাভাবে নভেম্বর মাসে আয়োজন করা হোক। এছাড়াও ডা. তাহের নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছেন প্রার্থী proportional representation (পিআর) এবং প্রচলিত পদ্ধতিই বিবেচনায় রাখা হোক।

বৈঠকে প্রবাসীদের ভোটাধিকার, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি সংক্রান্ত বিষয়ও আলোচনা হয়। তবে পিআর ও গণভোট আগে না হলে দলের পরবর্তী অবস্থান কী হবে, সে বিষয়ে ডা. তাহের স্পষ্ট মন্তব্য করেননি।

জামায়াতের প্রতিনিধিদলে ডা. তাহের ছাড়াও ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোটের সমন্বয় নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনের সাথে গণভোট একসঙ্গে করার পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জামায়াতের মতে, নির্বাচনের সুষ্ঠু প্রক্রিয়া ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এই দুটি পৃথকভাবে আয়োজন করা উচিত।

গত বছরও নির্বাচনকালীন গণভোট নিয়ে নানা মতামত প্রকাশিত হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নির্বাচনের দিন যদি অতিরিক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, ভোটার বিভ্রান্তি এবং প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

জামায়াতের দাবি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নির্বাচনের সময় গণভোট অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ঝামেলা দেখা দিতে পারে। ডা. তাহেরের মন্তব্য অনুযায়ী, গ্রামীণ অঞ্চলের ভোটাররা দুই ভোটের জন্য সমানভাবে মনোনিবেশ করতে পারবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আলাদা গণভোটের আয়োজন নির্বাচন কমিশনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়। এটি ভোটার সচেতনতা, পুলিশের সহযোগিতা এবং ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ রাখার দিক থেকে কার্যকর হতে পারে।

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, জাতীয় নির্বাচনের সাথে গণভোট একসঙ্গে আয়োজন করা হলে ভোটার বিভ্রান্তি এবং প্রশাসনিক চাপ বাড়তে পারে। আলাদা আয়োজন করলে ভোটাররা সহজে অংশগ্রহণ করতে পারবে এবং ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হবে।

কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, জামায়াতের হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন যদি পরিকল্পিতভাবে আলাদা গণভোটের প্রস্তুতি নেয়, তাহলে ঝামেলা কমানো সম্ভব।

জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজন নিয়ে জামায়াতের উদ্বেগ এবং আলাদা আয়োজনের দাবি রাজনৈতিক পর্যালোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে। নির্বাচনের সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে মনোযোগী হতে হবে। ভবিষ্যতে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী হবে এবং রাজনৈতিক প্রভাব কেমন পড়বে, তা জনগণ ও রাজনৈতিক মহলের নজর রাখবে।

এম আর এম – ১৭৬২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button