
মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে বিএনপির ৭০ জন নেতাকর্মী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছেন। রোববার (১২ অক্টোবর) রাতে এক সাধারণ সভায় ফুল দিয়ে বরণ ও দোয়া মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের দলে স্বাগত জানানো হয়। স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে এই যোগদানকে “গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত” হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার বিস্তারিত ও সভার চিত্র
রোববার (১২ অক্টোবর) এশার নামাজের পর শ্যামপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় বিএনপির ৭০ জন কর্মী আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি ইমদাদুল হক।
প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মেহেরপুর জেলা আমির মাওলানা তাজ উদ্দিন খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সেক্রেটারি ইকবাল হোসাইন, রাজনৈতিক সেক্রেটারি কাজী রুহুল আমিন, সদর উপজেলা আমির মাওলানা সোহেল রানা, পৌর আমির সোহেল রানা ডলার, উপজেলা সেক্রেটারি ও আমঝুপি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী জাব্বারুল ইসলাম মাস্টার, শ্রমিক ফেডারেশনের জেলা সভাপতি আব্দুর রউফ মুকুল, শ্যামপুর ইউনিয়ন আমির মাওলানা মফিদুল ইসলাম এবং ইউনিয়ন সেক্রেটারি মকলেছুর রহমান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সভার উদ্বোধন হয়। পরে ফুলের তোড়া দিয়ে নতুন যোগদানকারীদের স্বাগত জানানো হয় এবং দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক পথচলার সফলতা কামনা করা হয়।
বিএনপি থেকে জামায়াতে যোগদানের পেছনের কারণ
জামায়াতে যোগ দেওয়া কর্মী ফরমান হোসেন বলেন, “জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিলেই নেতা হওয়া যায় না। এখানে কর্মী হতে হলে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে হয়, নির্দিষ্ট সিলেবাসভুক্ত বই পড়তে হয়, আর সঠিক আচরণ ও নৈতিকতা বজায় রাখতে হয়। আমরা সৎভাবে দেশের জন্য কাজ করতে চাই।”
নতুন যোগদানকারীদের মধ্যে অনেকেই আগে বিএনপির ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তারা জানান, দীর্ঘদিন দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিলেও স্থানীয় নেতৃত্বের বিভাজন ও অনিশ্চয়তায় তারা হতাশ ছিলেন। ফলে, সংগঠিত ও আদর্শনির্ভর রাজনীতির আশায় তারা জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন।
জামায়াত নেতাদের বক্তব্য: “ন্যায়ের সমাজ গড়ার সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে”
প্রধান অতিথি মাওলানা তাজ উদ্দিন খান বলেন, “জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী সবসময় জনগণের পাশে আছে। যারা আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, তারা আদর্শের ভিত্তিতে কাজ করতে বদ্ধপরিকর।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনগণের পাশে থাকা, তাদের অধিকার রক্ষায় দৃঢ় ভূমিকা রাখা এখন সময়ের দাবি। আমরা চাই, তরুণ ও কর্মঠ মানুষদের নিয়ে একটি নৈতিক সমাজ গড়ে তোলা।”
জেলা সেক্রেটারি ইকবাল হোসাইন বলেন, “এই যোগদান শুধু সংখ্যা নয়, এটি একটি বার্তা — মানুষ আদর্শভিত্তিক রাজনীতিতে ফিরে আসছে।”
স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ
স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বিএনপি কর্মীদের জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান আসন্ন স্থানীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে। শ্যামপুর ইউনিয়নসহ সদর উপজেলার কয়েকটি এলাকায় জামায়াতের সাংগঠনিক উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এক স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “দীর্ঘদিন বিএনপি’র স্থানীয় রাজনীতিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে সংগঠিত বিকল্প প্ল্যাটফর্ম হিসেবে জামায়াতের প্রতি কিছু কর্মী আগ্রহী হচ্ছে। এটি সামনের নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।”
অতীতের প্রেক্ষাপট ও সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধি
গত কয়েক বছরে মেহেরপুরে জামায়াতে ইসলামী একাধিকবার নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করেছে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়েও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ৫০ জন বিএনপি সমর্থক জামায়াতে যোগ দিয়েছিলেন। এবার একসঙ্গে ৭০ জন যোগ দেওয়ায় জেলা পর্যায়ে সংগঠনটির সক্রিয়তা আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
জামায়াতের স্থানীয় নেতারা জানান, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, আলোচনা সভা এবং সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়া তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও সংগঠনের প্রচারণা জোরদার করা হয়েছে।
অনুষ্ঠান শেষে নতুনদের হাতে সংগঠনের প্রতীক হস্তান্তর
সভা শেষে নতুন সদস্যদের হাতে জামায়াতে ইসলামী দলের প্রতীকী চিহ্ন ও দিকনির্দেশনামূলক লিফলেট তুলে দেওয়া হয়। স্থানীয় নেতারা বলেন, “এই প্রতীক শুধু রাজনৈতিক চিহ্ন নয়, এটি ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান ও দায়িত্বের প্রতীক।”
নবাগত সদস্যরা জানান, তারা সামাজিক কর্মকাণ্ড ও স্থানীয় উন্নয়নমূলক উদ্যোগে অংশ নিতে চান, যাতে জনগণের আস্থা অর্জন করা যায়।
মেহেরপুরে বিএনপির ৭০ কর্মীর জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন এক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে এটি কেবল একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়, বরং আদর্শ ও সংগঠিত রাজনীতির প্রতি মানুষের আকর্ষণেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এম আর এম – ১৭৫৬,Signalbd.com