বিশ্ব

২০২৬ সালে ট্রাম্পকে নোবেল দিতে ‘পুরো বিশ্বকে এক করবে’ ইসরাইল

Advertisement

২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনোনয়ন দিতে বিশ্বজুড়ে সমর্থন সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। দেশটির পার্লামেন্ট ‘নেসেট’ এই ঘোষণা দিয়েছে সোমবার (১৩ অক্টোবর)। ট্রাম্পকে ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’ আখ্যা দিয়ে ইসরাইল বলেছে, আগামী বছর নোবেল পুরস্কারের জন্য তাঁর প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংসদীয় নেতাদের একত্র করবে।

ইসরাইলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা

ইসরাইলি পার্লামেন্টের স্পিকার আমির ওহানা নেসেটে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আপনি শান্তির প্রেসিডেন্ট। এই পৃথিবীতে এমন আর কেউ নেই যিনি আপনার মতো করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন।”

তিনি আরও জানান, ট্রাম্পের প্রচেষ্টায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে অগ্রগতি এসেছে, যার ফলে বহু ইসরাইলি বন্দি মুক্তি পেয়েছে এবং গাজা অঞ্চলে মানবিক সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।

নেসেটের বৈঠকে উপস্থিত সংসদ সদস্যরা ট্রাম্পের প্রশংসায় দাঁড়িয়ে করতালি দেন। ওহানা বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোনয়ন জমা দেব। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন বিশ্বজুড়ে সংসদের স্পিকার এবং প্রতিনিধিরা।”

ট্রাম্পকে দেওয়া হচ্ছে ইসরাইলের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান

ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট ইসহাক হেরজোগ ঘোষণা দিয়েছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে ‘ইসরাইলি প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ অনার’ প্রদান করা হবে। এটি দেশটির সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান।

হেরজোগের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের পরিবারগুলোকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছেন। তাঁর মধ্যস্থতায় মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।”

যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্পের ভূমিকা

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের পটভূমিতে ট্রাম্পের ভূমিকা আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত হয়েছে। ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

ইসরাইলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এই প্রক্রিয়ায় ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে জড়িত ছিলেন এবং তাঁর নির্দেশে একাধিক মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্র সহযোগিতা করেছে। এর ফলেই সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গাজা উপত্যকায় তুলনামূলক শান্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

পূর্ববর্তী শান্তি উদ্যোগে ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদকালেই ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর মাধ্যমে ইসরাইল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান এবং মরক্কো—এই পাঁচটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ঐতিহাসিক চুক্তি হয়।

তখন থেকেই ইসরাইলি রাজনীতিকদের একাংশ তাঁকে ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করে আসছে। ট্রাম্পের প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ার অন্যতম প্রধান স্থপতি বলে বিবেচিত হয়, যদিও সেই সময় ফিলিস্তিন প্রশ্নে তাঁর নীতিকে অনেকেই সমালোচনা করেছিলেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইসরাইলের এই ঘোষণাকে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মার্কিন রিপাবলিকান নেতারা একে “উপযুক্ত স্বীকৃতি” বলে মন্তব্য করেছেন। অপরদিকে, ইউরোপের কিছু মানবাধিকার সংগঠন বলেছে, ট্রাম্পের নেতৃত্বে গৃহীত কিছু কঠোর নীতির কারণে তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়া বিতর্কিত হতে পারে।

তবে ইসরাইলি সংসদ সদস্যদের মতে, তাঁর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার দক্ষতাই তাঁকে এই সম্মানের যোগ্য করে তোলে।

নোবেল কমিটির প্রতিক্রিয়া কী?

এখনও পর্যন্ত নরওয়ের নোবেল কমিটি ইসরাইলের এই ঘোষণার বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। সাধারণত নোবেল মনোনয়নের প্রস্তাব জমা নেওয়া হয় ফেব্রুয়ারির মধ্যে। অর্থাৎ ২০২৬ সালের পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী বছর।

বিশ্লেষকদের ধারণা, ইসরাইল যদি আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পের প্রার্থিতা দাখিল করে, তাহলে বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে বড় আলোচনার জন্ম দেবে।

বিশ্লেষকদের মন্তব্য

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ ইসরাইলের কূটনৈতিক অবস্থানকে নতুন মাত্রা দেবে। কারণ, এটি কেবল একটি প্রস্তাব নয়, বরং বিশ্ব রাজনীতিতে ট্রাম্পকে পুনরায় গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেক রহমান বলেন, “ইসরাইলের এই ঘোষণার পেছনে কেবল কৃতজ্ঞতা নয়, রাজনৈতিক কৌশলও রয়েছে। ট্রাম্প যদি ভবিষ্যতে আবারও ক্ষমতায় ফেরেন, তাহলে ইসরাইল আগেভাগেই তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে চাইছে।”

ইসরাইলের এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ এটিকে ট্রাম্পের কূটনৈতিক অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ একে রাজনৈতিক পদক্ষেপ বলছেন। তবে একথা নিশ্চিত—২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারকে ঘিরে এবার থেকেই শুরু হয়ে গেছে বিশ্বজুড়ে বিতর্ক ও কৌতূহল।

এম আর এম – ১৭৫৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button