বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার এনামুল হকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দুর্নীতি দমন বিভাগ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে এ বিষয়ে অনুরোধ জানানোর পর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বিসিবির এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এনামুল হক এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)-এ দুর্বার রাজশাহী দলের হয়ে খেলছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিপিএলের বেশ কয়েকটি ম্যাচে স্পট ফিক্সিংয়ের সন্দেহজনক ঘটনা ধরা পড়ায় কয়েকজন খেলোয়াড়ের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যেই এনামুল হকের বিরুদ্ধে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার খবর এলো।
বিপিএলে ফিক্সিং সন্দেহ, তদন্তের আওতায় এনামুল
গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিপিএলের একাদশ আসরের বিভিন্ন ম্যাচে কিছু অসংগতিপূর্ণ ঘটনা দেখা গেছে, যা স্পট ফিক্সিংয়ের সন্দেহ জাগিয়েছে। ২২ জানুয়ারি প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এবারের বিপিএলে বেশ কিছু ম্যাচে পরপর কয়েকটি ওভারে একই রানের পুনরাবৃত্তি হয়েছে, যা স্বাভাবিক নয়। কিছু ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্যাটসম্যানদের ইচ্ছাকৃতভাবে আউট হওয়া কিংবা অস্বাভাবিক শট খেলা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
বিপিএলের কয়েকটি দলের মালিকপক্ষ ও কর্মকর্তারাও সন্দেহজনক ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে কিছু খেলোয়াড়ের নাম উঠে এসেছে, যাদের আচরণ তদন্তের আওতায় রাখা হয়েছে। বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগ বিষয়টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) দুর্নীতি দমন ইউনিটের (ACU) সঙ্গেও আলোচনা করেছে বলে জানা গেছে।
এনামুল হকের পারফরম্যান্স ও ক্যারিয়ার
৩২ বছর বয়সী এনামুল হক বিজয় জাতীয় দলের হয়ে ৫টি টেস্ট, ৪৯টি ওয়ানডে ও ২০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। এবারের বিপিএলে দুর্বার রাজশাহীর হয়ে ১২ ম্যাচে ৩৯২ রান করেছেন, যার মধ্যে একটি সেঞ্চুরি রয়েছে। পারফরম্যান্সের দিক থেকে তিনি এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
তবে রাজশাহীর পারফরম্যান্স খুব বেশি ভালো ছিল না। দলটি ১২ ম্যাচে ৬টিতে জয় পেয়েছে এবং ১২ পয়েন্ট অর্জন করেছে। তবে প্লে-অফে তাদের জায়গা নিশ্চিত হয়নি, যা নির্ভর করছে ঢাকা ও খুলনার ম্যাচের ফলাফলের ওপর।
কেন সরানো হয়েছিল অধিনায়কত্ব থেকে?
টুর্নামেন্টের শুরুতে এনামুল হক রাজশাহীর অধিনায়ক ছিলেন। কিন্তু ১৯ জানুয়ারি তাকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে তাসকিন আহমেদকে নেতৃত্বে আনা হয়। সে সময় রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজি জানায়, এনামুলকে ব্যাটিংয়ে আরও মনোযোগী করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, তাকে অধিনায়কত্ব থেকে সরানোর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে, যা বিসিবির চলমান তদন্তের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
বিসিবির অবস্থান ও তদন্তের অগ্রগতি
বিসিবি এখন পর্যন্ত এনামুল হকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
যদি স্পট ফিক্সিংয়ের সঙ্গে এনামুল হকের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এমনকি জাতীয় দল থেকে বহিষ্কার কিংবা দীর্ঘমেয়াদী নিষেধাজ্ঞা জারির মতো শাস্তিও আসতে পারে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সুনাম রক্ষার তাগিদ
বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা চান, ক্রিকেটে কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি না থাকুক। স্পট ফিক্সিংয়ের মতো ঘটনা বাংলাদেশ ক্রিকেটের সুনাম নষ্ট করতে পারে। তাই বিসিবির উচিত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
এখন দেখার বিষয়, বিসিবির তদন্ত কতদূর গড়ায় এবং এনামুল হকের ভবিষ্যৎ কীভাবে প্রভাবিত হয়। ক্রিকেটপ্রেমীরা চান, এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত হোক এবং দোষীরা যেন উপযুক্ত শাস্তি পান।