বাংলাদেশ

শিক্ষা ভবন অভিমুখে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা

Advertisement

রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা আজ (১৩ অক্টোবর) সকাল ১১টায় শিক্ষা ভবনের দিকে বড় আন্দোলনমূলক পদযাত্রা শুরু করবেন। এই পদযাত্রার মূল উদ্দেশ্য হলো সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন-২০২৫’ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলন পরিষদ এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ এবং দাবি

শিক্ষার্থীরা জানান, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় আইন বাস্তবায়নের কোনো স্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় তারা গভীর অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। তারা আর কোনো দেরি সহ্য করতে চাইছেন না। আন্দোলনের প্রধান বক্তব্য হলো, বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে গঠিত হোক না কেন, সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত খসড়া অধ্যাদেশ হালনাগাদ করতে হবে।

আন্দোলনের এক নেতৃস্থানীয় শিক্ষার্থী মো. নাঈম হাওলাদার বলেন, “যদি অধ্যাদেশ জারির চূড়ান্ত দিন বা সময়সূচি স্পষ্টভাবে জানানো না হয়, বর্তমান শিক্ষার্থারা অধ্যাদেশ পেতে না পারা পর্যন্ত তাদের পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকবেন।”

পদযাত্রার বিস্তারিত রোডম্যাপ

আজকের পদযাত্রা সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে শুরু হবে। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ কলেজ থেকে শিক্ষার ভবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।

  • ঢাকা কলেজ: সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে নীলক্ষেত থেকে যাত্রা শুরু করবে এবং পথে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে যুক্ত হবে।
  • বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ: পলাশী হয়ে বকশীবাজারে পৌঁছে পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করবে।
  • কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ: সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে শিক্ষার ভবনের পথে রওনা দেবে।
  • সরকারি তিতুমীর কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ এবং বাঙলা কলেজ: সকাল ১০টায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে পদযাত্রায় যোগ দেবে।

মূল অবস্থান কর্মসূচি বেলা ১১টায় শিক্ষা ভবনের সামনের আঙিনায় শুরু হবে।

শিক্ষার্থীদের মূল বক্তব্য

শিক্ষার্থীরা স্পষ্টভাবে জানান, সরকার থেকে কোনো অস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি বা টালবাহানা তারা গ্রহণ করবেন না। তাদের দাবি হলো সুনির্দিষ্ট সময়সূচি ও রোডম্যাপ প্রদান করা। আন্দোলন চলবে যতক্ষণ না প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ জারি এবং বাস্তবায়িত হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, “আমরা চাই, আইন বাস্তবায়নের সময় সকল অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। এটি হবে দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।”

প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় আইন: পটভূমি

চলতি বছরের ২৬ মার্চ সরকার ঘোষণা করে, রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে পৃথক করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি। এই সাত কলেজ হলো:

  1. ঢাকা কলেজ
  2. ইডেন মহিলা কলেজ
  3. বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ
  4. শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ
  5. কবি নজরুল সরকারি কলেজ
  6. মিরপুর বাংলা কলেজ
  7. সরকারি তিতুমীর কলেজ

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ইতিমধ্যে প্রস্তাবিত নাম অনুমোদন করেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডে উৎসাহ বৃদ্ধি, এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের গুরুত্ব

বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। সাতটি কলেজকে একত্রিত করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, আইনের প্রক্রিয়া দীর্ঘ হলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকবেন।

এছাড়াও, শিক্ষার্থীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, চলতি বছরের শিক্ষাবর্ষের নোটিশ, পরীক্ষার সূচি ও ভর্তি কার্যক্রম সবই নতুন আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং সম্ভাব্য সমাধান

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়া ইতিমধ্যেই প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার মাধ্যমে তাদের উদ্বেগ কমানোর চেষ্টা করছে। তবে শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, কেবল কথার ওপর নয়, কার্যকরী পদক্ষেপে বিশ্বাস রাখতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হলে, এটি হবে এক প্রগতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষানীতি। শিক্ষার্থীদের মতে, সরকার দ্রুত রোডম্যাপ প্রকাশ করলে আন্দোলন বন্ধ হতে পারে এবং তারা অধ্যাদেশ অনুযায়ী শিক্ষাজীবন পরিচালনা করতে পারবে।

শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা: সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব

এই পদযাত্রা শুধুমাত্র শিক্ষার দাবিতে নয়, এটি সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীরা দেখাতে চায় যে তারা শিক্ষার মানোন্নয়নের পক্ষের এবং স্বচ্ছ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার পক্ষের।

পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি সুসংগঠিত মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। তারা শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে রোডম্যাপ অনুযায়ী পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন, যা আন্দোলনের পেশাদারিত্ব ও গুরুত্ব বৃদ্ধি করছে।

আজকের পদযাত্রা শুধু একটি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয়, এটি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন-২০২৫ দ্রুত বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন উন্নত মানের শিক্ষা পাবেন, অন্যদিকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন দিকনির্দেশনা সৃষ্টি হবে।

শিক্ষার্থীরা স্পষ্টভাবে দাবি জানিয়েছেন, প্রতিশ্রুতি নয়, কার্যকরী সময়সূচি চাই। আজকের পদযাত্রা সরকারের প্রতি শিক্ষার্থীদের সংকেত যে, তারা অধ্যাদেশের বাস্তবায়ন পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের এই পদযাত্রা এবং আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। এটি শুধু ঢাকা নয়, সমগ্র দেশের শিক্ষার মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

MAH – 13296 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button