বিশ্ব

৩৪ বছর পর ইসরাইলের কারাগার থেকে ঘরে ফিরছে দুই ভাই, আপ্লুত মা-বাবা

Advertisement

ইসরাইলি কারাগারে ৩৪ বছর ধরে বন্দি থাকা দুই ভাই—আবদেল জাওয়াদ ও মোহাম্মদ—অবশেষে মুক্তি পাচ্ছেন। পশ্চিম তীরের কাতান্না গ্রামের শামাসনে মা-বাবা তাদের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। পরিবারের ঘরে আনন্দের রেশ ছড়িয়ে পড়েছে, যখন দীর্ঘদিনের বিচ্ছিন্নতার পর সন্তানদের ঘরে ফেরার খবর নিশ্চিত হয়।

কারাগার থেকে মুক্তির ঘোষণা

ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় আবদেল ও মোহাম্মদকে মুক্তি দেওয়া হবে। গাজায় আটক থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের সঙ্গে বিনিময়ে ইসরাইল সোমবার ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি দিচ্ছে। মা হালিমা শামাসন বলেন, “আজ আমার আনন্দের কোনো সীমা নেই। মনে হচ্ছে পৃথিবীতে আর কোনো আনন্দের জায়গা নেই।”

হালিমা ও বাবা ইউসুফ নাতি-নাতনি এবং অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছেলেদের স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঘরের দেয়ালে টানানো দুই ভাইয়ের কারাগারে যাওয়ার আগের ছবি এখন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। আবদেল জাওয়াদের বয়স ৬২, আর মোহাম্মদ পঞ্চাশের শেষ ভাগে।

পরিবার ও পুনর্মিলনের অনুভূতি

মা হালিমা ঐতিহ্যবাহী প্যালেস্টাইনি সূচিশিল্পে তৈরি ‘তাবরিজ’ পোশাক পরেছেন, আর বাবা ইউসুফ স্যুট ও কেফিয়া স্কার্ফ পরেছেন। ঘরের দেয়ালে ১৯৯০-এর দশকের ফিলিস্তিনি ‘প্রিজনার্স ক্লাব’ পোস্টারে দুই ভাইয়ের মুক্তির দাবির স্লোগান লেখা রয়েছে।

আবদেল জাওয়াদের ছেলে আজুজ বলেন, “বাবাকে ছাড়া বড় হওয়া এক বিশাল ট্র্যাজেডি ছিল। ৩৪ বছর পর বাবা ও চাচাকে জড়িয়ে ধরা অবর্ণনীয় আনন্দ।” আজুজ নিজেও দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা বাবার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি।

মুক্তি ও আইনি প্রক্রিয়া

ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, আবদেল জাওয়াদকে হত্যা, হত্যার চেষ্টা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে শত শত ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেয়েছিলেন, কিন্তু শামাসনের ভাইরা মুক্তি পাননি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনার ভিত্তিতে প্রথম ধাপে বন্দি বিনিময় চুক্তি কার্যকর হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরাইল ২৫০ জন বন্দি মুক্তি দিচ্ছে, আর গাজার যুদ্ধে আটক প্রায় ১,৭০০ জনকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

গাজার পরিস্থিতি ও স্থানীয় প্রভাব

মুক্তি কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গে গাজায় যুদ্ধবিরতির পর ত্রাণ সরবরাহ শুরু হয়েছে। লাখো ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে নিজেদের বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। দীর্ঘ দুই বছরের সংঘাতের পর প্রথমবারের মতো কিছুটা স্বস্তির শ্বাস নেওয়া সম্ভব হয়েছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে সেনা সরানোর পর, স্থানীয়দের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও বিভিন্ন এলাকায় ধ্বংসস্তূপে এখনও মানুষ ও মৃতদেহ রয়েছে।

পরিবারের প্রস্তুতি ও ঐতিহ্যবাহী আয়োজন

মা হালিমা ছেলেদের স্বাগত জানানোর জন্য ঐতিহ্যবাহী ভোজনের আয়োজন করেছেন। তিনি জানান, “আমরা একটি ভেড়া জবাই করব এবং পরিবারসহ যে কেউ দেখতে আসবে তাদের জন্য খাবার তৈরি হবে।” পুরো পরিবার গভীর উচ্ছ্বাস ও আশায় ভরে আছে।

বাবা ইউসুফ বলেন, “আমাদের বড় আশা হলো ছেলেরা দেশে থাকুক, বিদেশে পাঠানো না হয়। তবেই আমরা সম্পূর্ণ আনন্দ উপভোগ করতে পারব।”

বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদি বন্দি মুক্তি মানবিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ ধরনের বিনিময় প্রক্রিয়া ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর জন্য দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব করতে সাহায্য করবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, বন্দি মুক্তির এই পদক্ষেপ ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে সংঘাত কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ এবং ভবিষ্যতে শান্তি স্থায়ী করার জন্য আরো অনেক আলোচনা ও সমঝোতার প্রয়োজন।

৩৪ বছর পর দুই ভাইয়ের মুক্তি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবার, স্থানীয়রা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আনন্দ ও আশা ছড়িয়ে দিয়েছে। তবে গাজা অঞ্চলের নিরাপত্তা, পুনর্বাসন ও শান্তি স্থায়ী করার দিকেই সকলের মনোযোগ এখন। ছেলেদের ঘরে ফেরার আনন্দ এবং দীর্ঘদিনের বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি এক ইতিহাস হয়ে রয়ে যাবে।

এম আর এম – ১৭৪৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button