আঞ্চলিক

আসামি ছাড়াতে চুক্তির টাকা না পেয়ে ব্যবসায়ীর প্রাইভেটকার লুট!

Advertisement

চট্টগ্রামে এক ব্যবসায়ীর প্রাইভেটকার একটি চক্র হাতিয়ে নিয়েছে, কারণ তারা থানা থেকে আসামি ছাড়ানোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টাকা না পেয়েছে। ঘটনা ঘটে ডবলমুরিং থানার এলাকায় গত সোমবার। মেট্রো স্কাই লিমিটেডের কর্মকর্তা মো. হাসান বৃহস্পতিবার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এতে সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

ঘটনা ও অভিযোগের বিস্তারিত

মেট্রো স্কাই লিমিটেডের অফিসের কর্মকর্তা মো. হাসান জানান, ডবলমুরিং থানায় তাদের একজন কর্মকর্তা হাজতে থাকা অবস্থায় তাকে এবং তার সহকর্মীদের ভয় দেখানো হয়। এরপর স্থানীয় কিছু যুবক—প্রধানত ইলিয়াস খান ও মীর কাশেম—গাড়িচালক মোরশেদ আলমকে অপহরণ করে প্রাইভেটকারটি ছিনিয়ে নেয়।

জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইলিয়াস এবং মীর কাশেম প্রাইভেটকার ফেরত চাইতে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। এছাড়া, গাড়ি না দিলে অফিসের কর্মীদের কেটে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। জিডিতে অভিযোগ করা হয়েছে, থানার কিছু কর্মকর্তা মামলাটি যথাযথভাবে নিচ্ছেন না বরং অভিযোগকারীদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।

মেট্রো স্কাই সিটির চেয়ারম্যান হামিদুল ইসলাম রিপন বলেন, অফিসে কর্মরত মো. হাসানকে মুক্তি দিতে চক্রান্তমূলকভাবে থানা পুলিশ হাজতে ঢোকায়। পরে অফিসের লোকজন তাদের কথা বলে হাসানকে মুক্তি দেয়। এরপর বিএনপি নেতাদের নেতৃত্বে গাড়ি ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত কাদেরী চেম্বারের মেট্রো স্কাই সিটি লিমিটেড অফিস থেকে গত রবিবার বেলা ২টা থেকে আড়াইটার মধ্যে নগদ সাড়ে ৮ লাখ টাকা, একটি ল্যাপটপ ও প্রাইভেটকারের কাগজপত্র চুরি হয়। পরদিন সকালে অফিসের কর্মকর্তারা ডবলমুরিং থানায় অভিযোগ দিতে যান। প্রথমবার পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন, তবে রাতে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

এরপর হাসানসহ অফিসের কয়েকজন আবার থানায় গেলে পুলিশ তাদের মিথ্যা অভিযোগে হাজতে রাখে। এই প্রেক্ষাপটের কারণে ইলিয়াস ও মীর কাশেমের নেতৃত্বে যুবকরা গাড়ি ছিনিয়ে নেয়।

অভিযুক্ত ও দাবির বিষয়

জিডিতে উল্লেখিত প্রধান অভিযুক্তরা হলেন—ইলিয়াস খান, মীর কাশেম, মোহন, মাহি, শরিফুদ্দিন জুয়েলসহ মোট সাতজন। তারা গাড়ি ফেরত চাইতে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। এছাড়া, অফিসের লোকদের কেটে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। জিডি থেকে জানা যায়, গাড়ি ফেরত না পেলে আরও বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে ভয় দেখানো হয়েছে।

অভিযোগ অনুযায়ী, গাড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার সময় চালক মোরশেদ আলমকে অপহরণ করে আকবরশাহ থানার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে প্রতিষ্ঠানটি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাধারণ ডায়েরি করেন।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

এ ঘটনায় মেট্রো স্কাই লিমিটেডের কার্যক্রম প্রভাবিত হয়েছে। অফিসের নিরাপত্তা এবং কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও এই ঘটনার পর আতঙ্কে রয়েছে।

মেট্রো স্কাই সিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে এ ধরনের ঘটনা পুনরায় ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে চেয়ারম্যান হামিদুল ইসলাম রিপন বলেন, “অপরাধীদের শাস্তি এবং প্রাইভেটকার ও চুরি হওয়া টাকা উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি।”

অপরদিকে অভিযুক্তরা ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে। ইলিয়াস বলেছেন, তিনি ঘটনায় জড়িত নন। মীর কাশেম জানান, গাড়ি ইলিয়াসের অফিসের আশপাশে রয়েছে এবং গাড়ি ভাগাভাগি বিষয়ে বৈঠক হয়েছে।

আইনগত পদক্ষেপ ও মতামত

এ ধরনের চুক্তিভিত্তিক চাঁদাবাজি এবং প্রাইভেটকার ছিনতাই রীতিমতো উদ্বেগের কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ধরনের অপরাধ থেকে রক্ষা করার জন্য পুলিশি তৎপরতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আইন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুলিশের অনিয়ম এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ছে। তারা আরো বলছেন, এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে স্বচ্ছ ও শক্তিশালী তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া অপরিহার্য।

চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার এলাকায় ব্যবসায়ীর প্রাইভেটকার ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের জন্য সতর্কবার্তা। পুলিশের তৎপরতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং অপরাধীদের শাস্তি না হলে এ ধরনের ঘটনা পুনরায় ঘটতে পারে। মেট্রো স্কাই লিমিটেডের সাধারণ ডায়েরি এবং অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা এই ঘটনার ভবিষ্যত প্রতিক্রিয়ার মূল চাবিকাঠি।

এম আর এম – ১৭৪৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button