
উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের নেতৃত্বে দেশটি সম্প্রতি তাদের সর্বাধুনিক আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ICBM) হোয়াসং-২০ উন্মোচন করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম বলে দাবি করা হচ্ছে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, হোয়াসং-২০ একাধিক পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র বহনের জন্য সক্ষম, যা আমেরিকার বিদ্যমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।
হোয়াসং-২০ উন্মোচন ও কুচকাওয়াজ
শনিবার পিয়ংইয়ংয়ে ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজে হোয়াসং-২০ প্রথমবার জনসমক্ষে প্রদর্শিত হয়। কুচকাওয়াজে কিম জং উনের উপস্থিতিতে এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি দূরপাল্লার কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন লঞ্চ যান এবং অন্যান্য নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রও প্রদর্শিত হয়।
হোয়াসং-২০ একটি ১১-অ্যাক্সেল লঞ্চিং ট্রাকে স্থাপন করা হয়েছে এবং উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক কৌশলগত অস্ত্র ব্যবস্থা হিসেবে এটিকে বর্ণনা করা হয়েছে। কিম জং উন তার ভাষণে দেশটিকে সমাজতান্ত্রিক শক্তির বিশ্বস্ত সদস্য এবং পশ্চিমা আধিপত্যের হুমকির বিরুদ্ধে স্বাধীনতার দুর্গ হিসেবে উল্লেখ করেন।
সামরিক ক্ষমতা
উত্তর কোরিয়ার সামরিক সক্ষমতা দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। হোয়াসং-২০ ছাড়াও দেশটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ছোট ও মাঝারি দূরত্বের আইসিবিএম এবং ড্রোন ব্যবহারে দক্ষ। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হোয়াসং-২০-এর বিশেষত্ব হলো এটি একাধিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম, যা যুক্তরাষ্ট্রের মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে।
উত্তর কোরিয়ার সামরিক কুচকাওয়াজ পূর্বের মহড়ার ধারাবাহিকতায় আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। পূর্বে দেশটি সীমিত পরিসরে মিসাইল উৎক্ষেপণ করলেও, হোয়াসং-২০-এর প্রদর্শন আন্তর্জাতিক পরিসরে তাদের শক্তি প্রদর্শনের নতুন অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কিম জং উনের বক্তব্য ও রাজনৈতিক প্রভাব
কুচকাওয়াজের পর কিম জং উন একটি ভাষণে বলেন,
“আজ আমরা বিশ্বের সামনে একটি শক্তিশালী জাতি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছি। এমন কোনো বাধা নেই যা আমরা অতিক্রম করতে পারব না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, উত্তর কোরিয়া তাদের সামরিক শক্তির মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে।
কিম জং উনের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এটিকে সরাসরি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কিমের কৌশল, যাতে তারা বৈশ্বিক শক্তিশালী দেশের নজর কাড়ে এবং আলোচনামূলক চাপ তৈরি করতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
হোয়াসং-২০-এর উন্মোচন ও কিমের হুমকির পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং দ্রুত কৌশলগত বিশ্লেষণ শুরু করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানও তাদের সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উত্তর কোরিয়ার এই পদক্ষেপ সামরিক দিক থেকে সরাসরি হুমকি হলেও কূটনৈতিকভাবে এটি আরও জটিল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। আন্তর্জাতিক মহল শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে, তবে কিম জং উনের সামরিক প্রদর্শনীয় এ বিষয়টি সহজভাবে সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা কম।
সামরিক বিশ্লেষণ
হোয়াসং-২০ এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে এটি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের যে কোনো অংশে আঘাত হানতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর একাধিক ওয়ারহেড বহন করার ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কৌশলকে কার্যকরভাবে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।
উত্তর কোরিয়ার সামরিক কৌশল মূলত প্রতিরক্ষা ও ক্ষমতা প্রদর্শনের উপর ভিত্তি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হোয়াসং-২০-এর মাধ্যমে কিম জং উন আন্তর্জাতিক সমঝোতা ও কূটনৈতিক আলোচনায় সুবিধা অর্জন করতে চাচ্ছেন।
উত্তর কোরিয়ার হোয়াসং-২০ ক্ষেপণাস্ত্রের উন্মোচন এবং কিম জং উনের পারমাণবিক হুমকি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও কূটনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সরাসরি হুমকি, তবে এটি কূটনৈতিক চাপ ও আন্তর্জাতিক সমঝোতার অংশ হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। ভবিষ্যতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে কিনা এবং এটি কিভাবে সামলানো হবে, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করবে।
এম আর এম – ১৭৪৪,Signalbd.com