
ইসরায়েল গাজা থেকে জিম্মিদের মুক্তির পরপরই উপত্যকার ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ধ্বংস করার পরিকল্পনা করছে। এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন ও সমর্থনে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ জানিয়েছেন, জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার ধাপ শেষ হওয়ার পরই সেনাবাহিনী সুড়ঙ্গ ধ্বংস অভিযানে অংশ নেবে। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো হামাসের সামরিক ক্ষমতা নিরস্ত্রীকরণ ও তাদের আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ কমানো।
জিম্মিদের মুক্তির ধাপ
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতির আওতায় গত শুক্রবার থেকে জিম্মিদের মুক্তি শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা, যাদের মধ্যে জীবিত ব্যক্তিরা জীবিত অবস্থায় এবং মৃতদের লাশ হস্তান্তর করা হবে। বিনিময়ে ইসরায়েল ২৫০ জন কারাবন্দীকে মুক্তি দেবে। এছাড়াও ইসরায়েলি সেনারা গাজার আরও ১ হাজার ৭০০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, এই বিনিময় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের অংশ। তবে হামাস এখনো পুরোপুরি নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাবে সম্মতি দেয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে পরবর্তী ধাপে এই জটিল বিষয়গুলো সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।
গাজার ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গাজার ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। এই সুড়ঙ্গগুলো মূলত গোপন সরবরাহ, অস্ত্র সঞ্চয় এবং আকস্মিক হামলার জন্য ব্যবহৃত হয়। কিছু সুড়ঙ্গ সীমান্তের নিচ দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করে, যা ইসরায়েলের জন্য বড় নিরাপত্তা হুমকি।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ বলেছেন, “জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার ধাপ শেষ হওয়ার পর আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে হামাসের সব সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা। এই অভিযান পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
আগের দুই বছরে ইসরায়েল ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সুড়ঙ্গ ধ্বংস করেছে, তবে উপত্যকার পুরো নেটওয়ার্ক এখনও সক্রিয় রয়েছে। যুদ্ধবিরতির এই সময়ে, সুড়ঙ্গ ধ্বংস অভিযানকে পরবর্তী বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সমর্থন ও তদারকি
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গ ধ্বংস অভিযান যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক তদারকিতে পরিচালিত হবে। এই তদারকি মূলত যুদ্ধবিরতি কার্যকর রাখা এবং মানবিক ও নিরাপত্তা ঝুঁকি কমানো নিশ্চিত করবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ধ্বংস অভিযান চলাকালীন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা নিশ্চিত করবেন যে সাধারণ নাগরিকদের ক্ষতি না হয়। তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
হামাসের প্রতিক্রিয়া
হামাস এখনও পুরোপুরি নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাবে সম্মতি দেয়নি। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হোসাম বাদরান জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে অনেক জটিলতা ও সমস্যা রয়েছে। সুড়ঙ্গ ধ্বংস কার্যক্রম হামাসের প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে সীমিত করবে, কিন্তু এটি রাজনৈতিক এবং মানবিক জটিলতাও বৃদ্ধি করতে পারে।
হামাসের চোখে, এই পদক্ষেপ তাদের আঞ্চলিক প্রভাব ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ফলে ধ্বংস অভিযান বাস্তবায়ন করার আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে সম্ভাব্য ঝুঁকি ও প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করতে হবে।
সামরিক ও নিরাপত্তা প্রভাব
সুড়ঙ্গ ধ্বংস অভিযান সম্পন্ন হলে গাজার ভূগর্ভস্থ হামাসের কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে। এটি ইসরায়েলের সীমান্ত নিরাপত্তা শক্তিশালী করবে এবং আকস্মিক হামলার সুযোগ সীমিত করবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূগর্ভস্থ নেটওয়ার্ক ধ্বংস হলেও হামাসের সামরিক ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে শেষ হবে না।
সাধারণ মানুষ ও নগরায়ন ক্ষেত্রেও এই পদক্ষেপের প্রভাব থাকতে পারে। ধ্বংস কার্যক্রম চলাকালীন নিরাপত্তা বিধি কঠোর করা হবে, এবং কিছু এলাকায় চলাচলে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হতে পারে।
ইসরায়েল গাজার সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ধ্বংসের পরিকল্পনা করছে জিম্মিদের মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হামাসের সামরিক ক্ষমতা কমানো ও সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি। তবে রাজনৈতিক, মানবিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত জটিলতা এখনও রয়েছে। যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপে এই অভিযান বাস্তবায়ন হবে কিভাবে এবং তার প্রভাব কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্ভর করছে।
এম আর এম – ১৭৪৩,Signalbd.com