আঞ্চলিক

ক্ষোভ ঝাড়তে গিয়ে যে উপমা ব্যবহার করেছি সেটা উচিত হয়নি: সারজিস

Advertisement

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড় জেলা সফরের সময় তিনটি অনুষ্ঠানেই বক্তৃতা দেওয়ার সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাট হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রোববার (১২ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে তিনি লিখেছেন, ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে যে উপমা ব্যবহার করেছি তা করা উচিত হয়নি।

অনুষ্ঠানে ঘটনার বিবরণ

সারজিস আলমের নেতৃত্বে পঞ্চগড়ে অনুষ্ঠিত তিনটি এনসিপি অনুষ্ঠানে প্রতিবারই বক্তৃতা শুরু করার পর মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেছে। প্রথমবার ঘটনাটি ঘটলে তিনি কিছু বলেননি, দ্বিতীয়বারও ধৈর্য ধারণ করেছেন। তবে তৃতীয়বার আবার একই ঘটনা ঘটায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, প্রোগ্রামের আগে এবং পরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভদ্রভাবে কথা বলা হলেও এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি বারবার ঘটে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হয়।

সারজিস আলম জানান, তিনটি প্রোগ্রাম তিন ভিন্ন দিনে ও ভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হলেও প্রতিবারই বিদ্যুৎ বিভ্রাট একইভাবে ঘটেছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সকল মিডিয়ার উপস্থিতি এই ঘটনার সাক্ষী।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিক্রিয়া

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পর সারজিস আলম ক্ষিপ্ত হয়ে বক্তব্যে বলেন, “এই রাজনৈতিক দেউলিয়াদের দেখে নেব, তাদের কলিজা কত বড়। কলিজা ছিঁড়ে রাস্তায় ফেলে রাখবো।” পরে তিনি নিজ ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে যে উপমা ব্যবহার করেছি তা ঠিক ছিল না। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা এই ধরনের আচরণ করেন, যাতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করা যায়।

সারজিস আলম আরও জানান, জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সেক্টরের কিছু কর্মকর্তা ছোটলোকি বা অন্য দলের দালালি মূলক আচরণ করে থাকে। এজন্য প্রোগ্রামের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত বাধা সৃষ্টি হয়।

পঞ্চগড়ে এনসিপির কার্যক্রম ও লং মার্চ

চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, সিন্ডিকেট, দুর্নীতি ও মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে এনসিপি পক্ষ থেকে সারজিস আলমের নেতৃত্বে পঞ্চগড় শহর থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত লং মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। লং মার্চে প্রায় দুই হাজার মানুষ মোটরসাইকেলে অংশগ্রহণ করে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয়। মোটরসাইকেল লং মার্চের সময় সারজিস আলম রাতে সাড়ে ৯টার দিকে বক্তব্য রাখার সময় আবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং উপমা ব্যবহার করেন।

সারজিস আশাবাদ ব্যক্ত করেন, মিডিয়ার দৃষ্টি শুধু এই ঘটনার দিকে নয়, বরং লং মার্চের মাধ্যমে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি ও সামাজিক মূল্যবোধের দিকে আরও ফোকাস করবে।

সারজিস আলম বলেন,

“প্রত্যেকবার প্রোগ্রামের আগে কর্মকর্তাদের জানানো হয়। অনুষ্ঠানের পরও ভদ্রভাবে বলা হয়েছে। তবে যখন একই চিত্র বারবার দেখা যায়, তখন তাদের সঙ্গে সুশীল আচরণ প্রদর্শন করার কোনো প্রয়োজন অনুভব করি না। ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে যে উপমা ব্যবহার করেছি, তা করা উচিত ছিল না।”

তিনি আরও যোগ করেন, জেলা পর্যায়ে কিছু কর্মকর্তার ছোটলোকি আচরণ রাজনৈতিক সফলতার জন্যে হুমকি স্বরূপ।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

পঞ্চগড়ে এই ঘটনাটি স্থানীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে তীব্র করেছে। সারজিস আলমের বক্তব্য এবং ঘটনার সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পুনরাবৃত্তি স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের প্রতি সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষোভ প্রকাশ এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

এছাড়া, সাধারণ জনগণ ও এনসিপির সমর্থকরা সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য লং মার্চে অংশগ্রহণ করে, যা স্থানীয় রাজনীতির দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ।

সারজিস আলমের ফেসবুক পোস্ট এবং পঞ্চগড়ে অনুষ্ঠিত লং মার্চে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পর তার ক্ষোভ প্রকাশের ঘটনাটি স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও প্রশাসনিক আচরণের উপর আলোকপাত করেছে। তিনি স্বীকার করেছেন যে ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে যে উপমা ব্যবহার করেছেন তা ঠিক ছিল না।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক নেতাদের উত্তেজনা প্রকাশ এবং জনগণের সাথে যোগাযোগের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ও কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনও জনগণের আস্থা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।

এম আর এম – ১৭৩৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button