বিশ্ব

আফগান পাল্টা হামলায় ১২ পাকিস্তানি সেনা নিহত, ৬ আটক।

Advertisement

আফগানিস্তানের হেলমান্দ ও কান্দাহার প্রদেশে সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলেছে। আফগান সেনাদের পরিচালিত পাল্টা অভিযানকালে অন্তত ১২ পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ছয়জনকে জীবিত আটক করার তথ্য পাওয়া গেছে। হামলাগুলোতে আফগান বাহিনী অনেক সামরিক ঘাঁটি দখল করেছে এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে।

হেলমান্দ প্রদেশে অভিযান ও পাকিস্তানি সেনাদের হতাহতের ঘটনা

শনিবার (১১ অক্টোবর) রাতের ঘটনা অনুযায়ী, হেলমান্দ প্রদেশের বাহরামচা জেলায় আফগান সেনারা পাকিস্তানি সামরিক চৌকিগুলোর উপর হামলা চালায়। আজম কোরের ৭ম ফ্রন্টিয়ার কোর সূত্রে জানা যায়, এই হামলায় ১২ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।

অভ্যন্তরীণ সূত্র হুররিয়ত রেডিওকে জানিয়েছে, আফগান বাহিনী হামলা চালিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি দখল করতে সক্ষম হয়েছে। এই হামলা আফগান বাহিনীর প্রতিরক্ষা ও পাল্টা অভিযানের দক্ষতার প্রতিফলন হিসেবে ধরা হচ্ছে।

খোস্ত প্রদেশে পাক সেনাদের আটক

একই সময়, পৃথক এক অভিযানে খোস্ত প্রদেশের পালুচা এলাকায় আফগান সেনারা আহত অবস্থায় দুই পাকিস্তানি সেনাকে জীবিত আটক করতে সক্ষম হয়েছে। নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে জানা যায়, এই অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং বন্দী সেনাদের তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় রাখা হয়েছে।

কান্দাহার প্রদেশে পাকিস্তানি মিলিশিয়ার চৌকি ধ্বংস

নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে, কান্দাহার প্রদেশের মারুফ জেলার লোই বন্দ এলাকাতে আফগান সেনারা সাতটি পাকিস্তানি মিলিশিয়া চৌকি ধ্বংস করেছে। এই অভিযান চালিয়ে ছয়জন পাকিস্তানি সেনাকে জীবিত আটক করা হয়েছে এবং প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, আফগান বাহিনী পূর্ব নির্ধারিত রুট ধরে শত্রুপক্ষের অতিরিক্ত অবস্থানগুলোর উপরও হামলা চালিয়েছে। এতে আফগান বাহিনী সামরিক কৌশলগতভাবে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে।

আজম কোরের ৭ম ফ্রন্টিয়ার কোরের ভূমিকা

আজম কোরের ৭ম ফ্রন্টিয়ার কোর হলো একটি বিশেষ সামরিক/পারামিলিটারি ইউনিট, যা সীমান্ত ও সামরিক অপারেশনে সক্রিয়। এই ইউনিট আজম কোরের সঙ্গে যুক্ত এবং সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শত্রুপক্ষের অবস্থান নিয়ন্ত্রণ ও যুদ্ধ পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। ৭ম ফ্রন্টিয়ার কোরের নামকরণ মূলত ইউনিটের সনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।

আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি

হেলমান্দ ও কান্দাহারের এই ঘটনা আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে তা প্রমাণ করছে। সীমান্ত অঞ্চলে বারবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে, যা দুই দেশের মধ্যকার সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় পাকিস্তানি মিলিশিয়ার উপস্থিতি এবং আফগান সেনাদের পাল্টা অভিযান সীমান্তে নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। এই অভিযানের মাধ্যমে আফগান সেনারা কেবল শত্রুপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, বরং সীমান্তের নিরাপত্তা এবং অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করেছে।

আফগান সেনাদের কৌশল ও সামরিক দক্ষতা

সম্প্রতি আফগান সেনাদের পরিচালিত এই ধরণের অভিযান তাদের সামরিক কৌশল ও পরিকল্পনার দক্ষতা প্রদর্শন করেছে। বাহরামচা ও মারুফের অভিযানে আফগান বাহিনী শত্রুপক্ষের চৌকিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে কার্যকরী হামলা চালিয়েছে।

অভিজ্ঞ সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আফগান বাহিনী সীমান্তবর্তী অঞ্চলে কার্যকরভাবে শত্রুপক্ষের অবস্থান চিহ্নিত করে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও হামলা পরিচালনা করতে সক্ষম হচ্ছে। এছাড়া বন্দী সেনাদের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্যও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।

বন্দী সেনাদের ভূমিকা ও নিরাপত্তা তথ্য

আফগান সেনারা আটকের মাধ্যমে বন্দী পাকিস্তানি সেনাদের নিরাপদে নিয়ন্ত্রণে রাখছে এবং তাদের তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এই তথ্য সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বন্দী সেনাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য আফগান বাহিনীকে সীমান্তে ভবিষ্যতে সংঘর্ষ বা হামলার সম্ভাব্য জায়গা শনাক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অস্ত্র ও গোলাবারুদের জব্দ

হেলমান্দ ও কান্দাহারের এই অভিযানগুলিতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে। এতে আফগান সেনাদের সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং শত্রুপক্ষের সামরিক শক্তি সীমিত হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরণের অভিযান আফগান বাহিনীর সামরিক আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করছে এবং সীমান্ত অঞ্চলের সামরিক সমীকরণে পরিবর্তন আনছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ প্রভাব

আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে এই ধরনের ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তে সংঘর্ষের পুনরাবৃত্তি উভয় দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে।

তবে আফগান বাহিনীকে এটি কার্যকরভাবে পরিচালনার ফলে সীমান্তে শত্রুপক্ষের আধিপত্য কমাতে সক্ষম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের অভিযান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

হেলমান্দ ও কান্দাহারের সাম্প্রতিক অভিযানগুলি আফগান সেনাদের সামরিক কৌশল, দক্ষতা এবং সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। এই অভিযানে ১২ পাকিস্তানি সেনা নিহত, ছয়জন বন্দী এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারু জব্দ করা হয়েছে।

সীমান্তে সাম্প্রতিক উত্তেজনা এবং আফগান সেনাদের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গুরুত্ব পাচ্ছে। আফগান বাহিনী ভবিষ্যতে সীমান্তে আরও নিরাপদ ও কৌশলগত কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

MAH – 13278 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button